মোয়াজ্জেম হোসেন রতন টানা ১৫ বছর সুনামগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার টিকিট পাননি। তবে এই দেড় দশকে নিজের নামে ও দুই স্ত্রীর নামে নগদ টাকা, গয়না, বিনিয়োগ ও সঞ্চয়সহ স্থাবর সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন তিনি। এতে তার নিজের নামে জমি কমে গেলেও স্ত্রীর নামে জমি বেড়েছে প্রায় ৩০০ গুণ। তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে এমপি রতনের কাছে ছিল ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৩০ টাকা। ২০২৩ সালে তার হাতে রয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৯ টাকা। রতন ব্যাংকের হিসাবে ২০০৮ সালে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩০৩ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৩ টাকা। ২০০৮ সালে এমপি রতনের নিজের নামে কোনো বন্ড, ডিবেঞ্চার বা শেয়ার না থাকলেও এমপি হওয়ার পর তিনি ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮৬০ টাকার বন্ড ও শেয়ার কিনেছিলেন। বর্তমান হলফনামায় এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩০-এ। লক্ষ
এমপি রতনের স্থাবর সম্পত্তির ব্যবসা অনেক বেড়েছে। একসময় বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করা রতন এখন নিজের ও স্ত্রীর নামে ব্যবসা চালান। এর মধ্যে পায়েল টেক্স লিমিটেডের ১০ লাখ, হাওর বাংলা গ্রুপের ৩ লাখ, হাওর বাংলা ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো লিমিটেডের ৩ লাখ, হাওর বাংলা কোরিয়া গ্রিন এনার্জির ৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা এবং পিআরএস আমদানির ৬ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় করেন। এক্সপোর্ট লিমিটেড।
এমপি হওয়ার আগে কৃষি খাত থেকে রতনের বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা, কিন্তু এখন সেই খাত থেকে তার আয় ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এমপি রতন ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৪২ হাজার ৫৪৬ টাকা আয় দেখালেও এবার এ খাতের ঘর ফাঁকা। তাছাড়া তিনি উল্লেখ করেছেন ৫০ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ও ভাতা বাবদ ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ৪২৭ টাকা হলেও অন্যান্য খাত থেকে তার আয় ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৯২৪ টাকা, যা ২০০৮ সালে ছিল ৫৪ হাজার ৪ টাকা। তাও এসেছে ব্যাংক সুদ থেকে।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের মতো তার দুই স্ত্রীর সম্পদও বেড়েছে। স্ত্রীর নামে নগদ ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ৮২৬ টাকা রাখা হয়েছে। ২০০৮ সালে, তার কাছে সোনা বা রৌপ্য না থাকলেও তিনি তার স্ত্রীর নামে ৪০ টাকা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এমপি হওয়ার পর ওই ৪০ টাকা এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কাছে যায় এবং স্ত্রীর নামে ৬০ ভরি স্বর্ণ যোগ হয়। এই হলফনামায় তা অপরিবর্তিত রয়েছে।
২০১৮ সালে রতনের কৃষি ও অকৃষি জমি ছিল ২০ কোটি ৩৭ হাজার টাকা, কিন্তু ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭ লাখ ১৭ হাজার ৬৪৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে স্ত্রীর নামে ১ একর জমি বেড়েছে। ৩০১ .৬ শতাংশে। এর বাজার মূল্য আনুমানিক ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৪ টাকা।
হলফনামায় দেওয়া সম্পদের হিসাব প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, হলফনামায় যা দেখানো হয়েছে তা সত্য। এ ছাড়া আমার আর কোনো আয়ের উৎস নেই। অনেকে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে আমার ফায়দা নিয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের জবাব দেওয়া হবে।