বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্য সব থেকে খাটুনি বেশ করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশ। তারা দেশে সব সময় সব কাজে এগিয়ে থাকে সবার আগে। তবে অনেক সময় এই পুলিশ সদস্যরাই হয়ে থাকে অনেক নেক্কারজনক ঘটনার শিকার। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বিস্তর স্ট্যাটাস দিয়েছেন জুলকারনাইন সায়ের। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু:-
বাংলাদেশ পুলিশের কয়েকজন সদস্য (তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি) আজ আমাকে দিনভর একই রকমের কিছু বার্তা প্রেরণ করেছেন। তাদের পাঠানো ম্যাসেজগুলোর ভাষ্য অনেকটা এমন (প্রায় সবাই একই রকমের ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন, যার কিছুটা পরিমার্জিত করে আমি পোস্ট করছি)।
“ভাই, আমরা ছোটপদে চাকুরী করি, ১২-১৪ ঘন্টা ডিউটি করি, তেমন বিশ্রাম পাইনা। পরিবারকেও সব সময় দেখতে যেতে পারিনা, কারন আমাদের পদে ছুটি পাওয়া খুব কষ্টের। আমরা অনেক কষ্টে (তারা লিখেছেন শিক্ষাগত যোগ্যতা এসআই-বিসিএস ক্যাডারের সমমানের) হওয়া সত্বেও সাধারন পদে চাকুরী নিয়েছি (প্রত্যেকেই ৬-৯ লক্ষ টাকা খরচের কথা উল্লেখ করেছেন)।
কিন্তু এমন একটা দিন নাই যেদিন সরকারী দলের নেতা-কর্মী বা তাদের আত্মীয়দের হাতে আমাদের অপমান হতে হয়না। গতকাল আমাদের দুইজন সহকর্মী কে কুকুরের মত মারলো এমপি সাহেবের ছেলে। তাদের গায়ে পুলিশের পোশাক ছিলো। থানায় গিয়েও এমপির ছেলে আমাদের স্যারকে গালি দিলো, প্রচুর খারাপ গালি দিলো। কিন্তু স্যার তাকে অনেকবার স্যরি বললো, আমাদের যে দুইটা ছেলেকে মারলো তাদেরকে দিয়ে মাফ চাওয়ালো। সকালে ওই এমপির ছেলে বাসায় চলে গেলো।
সবাই আমাদেরকেই খারাপ বলে, তারা বলে আমরা নাকি সরকারের গোলাম। আমরা নিজেদের জমি, পরিবারের গহনা বেচে চাকরী নিয়েছি। পয়সা দিয়ে চাকরী নিলাম কি গোলামি করে কিল-ঘুষি খাওয়ার জন্যে? আপনি তো সাংবাদিক অনেক মানুষ আপনার লিখা পড়ে আমাদের স্যারেরাও আপনার কথা আলোচনা করে। তাই আপনাকে এই ম্যাসেজ করলাম। দয়া করে আমাদের কোন ক্ষতি করবেন না।
আপনার মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও দেশের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, যদি এমপির ছেলে আমাদের থাপ্পড় দিতে পারে তাহলে সবাই কেন দিতে পারবেনা? পুলিশের পোশাক পরিহিত দায়িত্ব পালনরত সদস্যকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে যদি একজন এমপির পুত্র রেহাই পেয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের সব নাগরিকের জন্যেই একই নিয়ম অনুসরণ করা হোক।
সরকারী ছুটি বা ঈদ-পূজা-বড়দিন, আমরা প্রতিদিনই সময়মত ডিউটিতে যাবো, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজবো, আধা-বেলা নিম্নমানের খাবার খাবো (যা প্রায়ই সময় মতো আসেনা বলে তারা উল্লেখ করেছেন) আর দিন শেষে চাতক পাখীর মত উন্মুখ হয়ে থাকবো কখন কোন মাননীয় আমাদের পেটাবেন। জানিনা আপনি এটা পড়বেন কিনা। যদি পড়েন তাহলে আমাদের সন্তান-পরিবারের জন্যে হলেও একটু লিখাটা দিয়েন। আপনার জন্যে দোয়া রইলো”
ব্যাকগ্রাউন্ডঃ বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সুত্রে এবং বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা যায় ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর ছোট ছেলে ইন্তেশার চৌধুরী গতকাল গুলশান এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের একটি গাড়িকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর গুলশানে ট্রাফিক পুলিশের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগ কার্যালয়ের ফটকের সামনের রাস্তায়।
সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে ইন্তেশারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান এবং কথা–কাটাকাটি করতে করতে একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের মারধর শুরু করেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বরাতেঃ
“পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, পরিচয় জানার আগে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু পরিচয় জানার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তাঁরা। তবে রাতভর গুলশান থানায় বসিয়ে রাখা হয় ইন্তেশারকে। তাঁর বান্ধবীকে মধ্যরাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় পুলিশ সূত্র জানায়, ইন্তেশার চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়। পরে সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর গাড়িচালক আরিফের জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুচলেকা দিয়ে গুলশান থানা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে চলে যান ইন্তেশার চৌধুরী।”
প্রসঙ্গত, এ দিকে পুলিশ পেটানো সেই এমপির ছেলেকে নিয়ে এখনো কোনো ধরনের কথা শোনা যায়নি। নেওয়া হয়নি তার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা। আর এই কারনে এ নিয়ে এখন সব খানে হচ্ছে বেশ সমালোকনা।