ঢাকাই সিনেমার অন্যতম উদীয়মান জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। তবে পর্দায় ‘ঐশী’ নামেই অধিক জনপ্রিতা পেয়েছেন তিনি। অভিনয় জগতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০২০ সালে। আর এরই মধ্যে কোটি ভক্তের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এদিকে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় গুণী এই তারকার অভিনীত সিনেমা ‘রাত জাগা ফুল’। সিনেমাটি এরই মধ্যে ভক্তের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে।
বছরের শেষ দিন ‘রাত জাগা ফুল’ মুক্তি পেয়েছে। আপনি ছবিটি নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
মুক্তির দিনই প্রথম একসঙ্গে পুরো সিনেমা দেখেছি। সাধারণ দর্শক এবং সিনেমার অংশ হিসেবে আমি এত খুশি যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। তবে এটুকু জানি, আবুল হায়াত স্যার, ফজলুর রহমান বাবু ভাই, মীর সাব্বির ভাইয়াদের মতো অত ভালো করিনি। তাঁদের অভিনয়ের পাশে আমি কিছুই না।
সিনেমাটি নিয়ে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন?
যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা খুবই খুশি। আমার কঠোর এক সমালোচক বন্ধু সব সময় আমার ভুল ধরে বেড়ায়, সে-ও খুশি। সবাই প্রশংসা করছেন চরিত্রটির, এটা বড় পাওয়া।
অভিনেত্রী তারিনসহ অনেকেই ফেসবুকে আপনার অভিনীত চরিত্রের প্রশংসা করেছেন?
তারিন ম্যাম আমার মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের অডিশনে ছিলেন। তখন থেকেই চেনাজানা। সিনেমা শেষ হওয়ার পর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রশংসা করেছেন। যে মানুষটা আমার শুরুটা দেখেছেন, তিনি যখন বলেন, ‘তোর অভিনয় ন্যাচারাল হয়েছে, ভালো করবি’, তখন মনে হয় হয়তো কিছুটা শিখতে পারছি।
আর কারা শুভকামনা জানিয়েছেন?
দীপা খন্দকার আপু, নাজনীন চুমকী আপু, চঞ্চল চৌধুরী ভাইসহ অনেকেই একটি শো শেষে শুভকামনা জানিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চঞ্চল ভাইকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখে আমি চিনতে পারিনি। তার ওপর আবার হুডি পরেছিলেন। তিনি দূর থেকে থাম দেখাচ্ছিলেন। এমনিতে হলের মধ্যে লাইট কম ছিল। পরে কিছুটা কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। প্রথমে ভাবছিলাম, এই মানুষটা কে? চোখ দেখে মনে হলো, ‘ও আপনি চঞ্চল ভাইয়া?’ পরে তাঁর কথা শুনে কেঁদে ফেলেছি।
কী বলেছিলেন চঞ্চল?
আমি চঞ্চল ভাইয়ের অনেক বড় ভক্ত। আগে ভাইয়ার সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলার সুযোগ হয়নি। এবার প্রথম কথা হওয়ার সময় যখন ভাইয়া বললেন, ‘ইয়েস, খুবই ভালো করেছ। ন্যাচারাল অভিনয় হয়েছে।’ এমন একজন মানুষের মুখে প্রশংসা শুনব, কল্পনাও করিনি। আমি সহজে ইমোশনাল হওয়ার মতো মেয়ে না, কিন্তু তখন কাঁদছিলাম। কোনোভাবেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না। চঞ্চল চৌধুরী মানে, আমার কাছে সামথিং এলস টু মি।
এই মুহূর্তে আপনার ‘মিশন এক্সট্রিম’ ও ‘রাত জাগা ফুল’ নামে দুটি সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে চলছে…দুটি সিনেমার পোস্টারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করলেন…কী মনে করে?
আমার ঢালিউডে অভিষেক হওয়ার কথা ছিল আরও দুই বছর আগে। এই সময়ে অনেকে ফোন দিয়ে আমাকে মানসিক সান্ত্বনা দিতেন, আমি অনেক খারাপ সিচুয়েশনের মধ্যে আছি। আমার মন খারাপ, সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। কিন্তু এটা নিয়ে আমার মন খারাপ হতো না। দিন শেষে এখন দুটি সিনেমা একসঙ্গে চলছে। তাঁরা আমার হ্যাপিনেসটা দেখুক। ‘মিশন এক্সট্রিম’ সাকসেসফুল সিনেমা। ‘রাত জাগা ফুল’ মাত্র মুক্তি পেয়েছে। আমি মনে করি, একবার হলেও দেশের দর্শকদের সিনেমাটি দেখা উচিত।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে আছে?
না, না। আমি কখনোই পরিবারের সঙ্গে সিনেমা দেখব না। আমার ভীষণ লজ্জা লাগে। বাসায় টেলিভিশনে ইন্টারভিউ চলতে দেখলে আমি দেখার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ করে দিই। আমি বাসায় থাকলে আমার মা-বাবা আমার কোনো কিছুই টিভিতে দেখতে পারেন না। আর একসঙ্গে সিনেমা কখনোই না। তবে সিনেমাটি আমার মা দেখেছেন, বাবা শিগগির দেখবেন।
মা কী বললেন?
মাকে আগেই বলেছিলাম, মেয়ে হিসেবে নয়, একজন সাধারণ দর্শক হয়ে মন্তব্য করতে। তিনি ঐশী নামের নায়িকাকে পর্দায় দেখে ভীষণ খুশি। সিনেমার গল্প, নির্মাতা ও অন্যদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন।
ক্যারিয়ার নিয়ে কখনো হতাশা কাজ করে?
প্রত্যেক শিল্পীই আবেগপ্রবণ হন। এ জন্য তাঁদের আক্ষেপ থাকেই। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে এখনই এগুলো ভাবছি না। কিন্তু খারাপ লাগে, চলচ্চিত্র গ্রুপে লাখ লাখ মানুষ, তাঁরা নিজেদের চলচ্চিত্রপ্রেমী পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু সিনেমা হলে কোনো দর্শক নেই। সবাই ওটিটির জন্য অপেক্ষা করছেন। তাহলে কি দেশের দর্শক আর হলে সিনেমা দেখবেন না?
কখনো মনে হয়, ঢালিউডে টিকে থাকতে হবে?
আমার ওপর এমন কোনো প্রেশার নেই। আমি সিনেমা ভালোবাসি। আমি যদি সিনেমার জন্য পদার্থ হতে পারি, তাহলে হয়তো টিকে থাকব। আর আমি অপদার্থ হলে এমনিতেই ঝরে পড়ে যাব। আমি একটি ইন্ডাস্ট্রির বোঝা হতে চাই না। কাজ শিখে ভালো কাজ দিয়েই টিকে থাকতে চাই। যোগ্য না হলে এখানে কাজ করতে চাই না।
নতুন কাজ নিয়ে কী ভাবছেন?
আমি তো অত বেশি কাজ করতে চাই না। একটু ভালো গল্প, চরিত্র পেলেই কাজ করব। বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য জমা হয়েছে। দুটি সিনেমার প্রমোশন ও মুক্তি নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এখন নতুন কাজ শুরু করব। কথা হচ্ছে, সময় হলেই সব জানাব।
২০২০ সালে আরিফিন শুভর বিপরীতে ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যদিয়ে বড় পর্দায় প্রথমবারের মতো পা রেখেই ভক্তের মন জয় করে নেন ঐশী। ফলে এই অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে আর কখনও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ইতিমধ্যে তার ঝুলিতে রয়েছে তিনটি সিনেমা।