বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ দিনের সফরে মালদ্বীপে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে মালদ্বীপপ্রবাসীদের আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি উপস্থিত প্রবাসীদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে বাংলাদেশের প্রবাসীদের কল্যানের জন্য যথাযথভাবে অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সাথে দর-কষাকষি করার যে সক্ষমতা সেটা অর্জন করতে পেরেছে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল (শুক্রবার) অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে মালদ্বীপপ্রবাসীদের আয়োজিত ঐ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তাঁর বক্তব্যে মালদ্বীপপ্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। মালদ্বীপপ্রবাসীরা যাতে তাঁদের অর্থ সহজে দেশে পাঠাতে পারেন, সে বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফরে গত বুধবার মালদ্বীপে গেছেন।
শেখ হাসিনা দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি না জমানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘বাড়িঘর বিক্রি করে দালালের হাতে টাকা দিয়ে আসার কোনো দরকার নেই। মানুষের মধ্যে প্রবণতা আছে। কেউ এসে সোনার হরিণ দেখাল, আর সেটা ধরার জন্য বিপদে পড়ে অনেক সময় মৃ’ত্যু হয়। এই রকম বহু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, এভাবে সোনার হরিণের পেছনে ছোটার কোনো দরকার নেই। আমরা অর্থনৈতিকভাবে শুধু উন্নতিই করছি না, কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে বিদেশে দৌড়াতে হবে না, নিজের দেশেই কর্মসংস্থান হবে। প্রবাসীদের কল্যাণ করা আমাদের দায়িত্ব। যারা বিদেশে আসতে চায়, তারা যেন দালাল ধরে না আসে। তারা যেন বৈধভাবে আসার চেষ্টা করে।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ, সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হ’/ত্যাকা’ণ্ডের পর নিজের প্রবাসজীবন ও দেশে ফেরার ঘটনাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজ অনেকে মানবাধিকারের কথা বলে। আজ অনেকে ন্যায়বিচারের কথা বলে। আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়েছি, বাবা-মা-ভাই বা সন্তান, আমাদের কোনো অধিকার ছিল না যে আমি বিচার পেতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকতে আমাকে আমার বাবার বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল যে করেই হোক বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমাকে করতেই হবে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সেই মানুষগুলোকে সুন্দর জীবন দেওয়া। এটুকু করতে পারলেই আমি মনে করি, সার্থকতা। এটুকু করতে পারলেই আমি মনে করি, যে ষ’ড়যন্ত্রকারীরা, খু’/নিরা আমার বাবাকে হ’/ত্যা করেছে বাংলাদেশের মানুষকে পদদলিত করে রাখার জন্য, তাদের জন্য উপযুক্ত জবাব আমি দিতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সরাসরি খুন করেছে, তাদের বিচার আমরা করতে পেরেছি। কিন্তু এর পেছনের যে ষ’ড়য’ন্ত্রকারী এখনো তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বারবার আমাকে মৃ’/ত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। কতবার আমাকে বন্দি করেছে!’
তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাকে ডিজিএফআই ক্যান্টনমেন্টেও নিয়ে গেছে জবাব শোনার জন্য, আমাকে ইন্টারোগেশন করার জন্য। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, জাতির পিতার মেয়ে। আমি এসবে কখনো পাত্তাও দিইনি। ভ’য় পাইনি।’
শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অর্জন তুলে ধরে বলেন, আজকে বাংলাদেশ আর কারও কাছে হাত পেতে চলার দেশ না। আজ বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আসার পর অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় এখন সবাই বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। এখন আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল করার সাহস পায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর কেউ আমাদের ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখতে সাহস পায় না। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের মানুষ এখন সম্মান নিয়ে চলতে পারে। আমরা এখন দর-কষাকষি করতে পারি। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি করতে পারবে না। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী খু’/নিরা সব সময় তৎপর আছে। তাদের ষড়যন্ত্র সব সময় থাকবে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাবার স্বপ্ন পূরণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার মালদ্বীপ পার্লামেন্টে তার ভাষণে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বর্বরতার কথা স্মরণ করেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সোলিহের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী দেশটিতে প্রথমবারের মতো সফর করছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের বিজয়ের পর তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের সামরিক সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করলে, আমার বাবা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ১০৭১ সালের ৭ই মার্চ সালে তিনি একটি বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেন এবং জনগণকে স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করার জন্য দেশের জনগনের প্রতি আহ্বান জানান।