নির্বাচনে ইভিএম এর ব্যবহার নিয়ে অনেক রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে ইভিএম এর পক্ষে থাকলেও বিপক্ষেও রয়েছেন অনেকে। যারা ইভিএম এর বিপক্ষে তাদের দাবি এর ব্যবহারে খুব সহজে ভোট জালিয়াতি করা সম্ভব। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও ইভিএম এর ব্যবহার নিয়ে সাম্প্রতিক সমাবেশ অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার অধীনস্থ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতা এই নির্বাচন কমিশনের নেই।
তিনি আরোও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আয়োজিত সংলাপে বেশিরভাগ দলই ইভিএমের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। কিন্তু গতকাল তিনি (সিইসি) বলেছেন, দেড়শটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। এভাবেই যদি সব হয় তাহলে এই সংলাপ কিসের জন্য?
বুধবার (২৪ আগস্ট) সকালে দৈনিক মজুরি, আবাসন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক ৩০০ টাকা দাবিতে আন্দোলন ও ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অধিকার
শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রিজভী শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু আমি এখানে তাদের গুরুত্ব দেখি না। বর্তমানে একজন শ্রমিক মজুরি পান ১২০ টাকা। সব কিছু বাদ দিলেও খাবারের দামে এই টাকা দিয়ে পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ আছে কি? আগে বলা হতো গরিব মানুষ ভর্তা-ভাজি দিয়ে ভাত খায়। এখন ভর্তি-ভাজির দাম বেশি। ভরাটের জন্য মরিচের প্রয়োজন, যার দাম আকাশ ছোঁয়া। এখন একরকম লবণ দিয়ে ভাত খেতে বলতে হবে। কিন্তু সেই চাল কেনার সামর্থ্যও নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার কেন ক্ষমতায় থাকতে বিদেশিদের সাহায্য নিচ্ছে। গতকাল আবারও তা প্রমাণ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমেই বলেছি, এই সরকার যাকেই নিয়োগ করুক, পরিচয় যাই হোক না কেন, তাদের অন্তরে ছাত্রলীগ যুবলীগ। যুবলীগ, ছাত্রলীগের অন্তরে থাকায় গণভবন থেকে যে নির্দেশ আসবে, তার বাইরে তারা যাবে না।
রিজভী বলেন, এই সরকার তাবেদার সরকার, নতজানু সরকার, অন্য দেশের মুখোমুখি, এসব আর বলতে হবে না। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা প্রমাণ করছেন তারা কার সরকার। কারণ তারা জনগণের কাছে যেতে পারে না। এত অন্যায়, এত অবিচার, এত খুন। তারা কিভাবে জনগণের কাছে যাবে? জনগণের মধ্যে তাদের কোনো ভিত্তি নেই। এ কারণে তারা বিদেশে ঘাঁটি তৈরি করছে। দেশের স্বার্থ বিক্রি করে তারা ক্ষমতায় থাকার স্বার্থে বিদেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মাঝে মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। নিজেদের স্বার্থে দেশের নিরাপত্তা বিদেশের কাছে বিক্রি করাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে? তারা আসলে মিথ্যার চেতনায় বিশ্বাসী। তারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনার কথা বলে মিথ্যার চেতনা ঢাকতে।
তিনি উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বলেন, আমরা যারা বিরোধী দলের রাজনীতি করি, সরকারের অন্যায়-অবিচার, গুম-খুনের সমালোচনা করি তারা আতঙ্কে আছি। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন করা হয়, নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহ।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম, শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ইভিএম হচ্ছে এমন একটি মেশিনের মেশিন দ্বারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে কোন প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা হয়। একজন ভোটার তার প্রার্থীর মার্কা ইভিএম মেশিন এর উপর দেখতে পাবে, সে তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে ওই চিহ্নর উপর চাপ দিয়ে ভোট নিশ্চিত করতে পারবে। অন্যদিকে পুরনো পদ্ধতিতে ভোট দিতে হলে কাগজে অর্থাৎ ব্যালট পেপারে নিজের প্রার্থীর মার্কার উপর চাপ দিয়ে ব্যালট পেপার ভাঁজ করে বক্সে রেখে দিলে ভোট নিশ্চিত হয়।