গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ মহিউদ্দিন রনি প্রতিবাদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, যিনি রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান করছেন। রোববার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মহিউদ্দিন রনির করা প্রতিবাদকে কেন্দ করে ডা. জাফরুল্লাহ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে হুইল চেয়ারে বসে অবস্থান নেন। কিন্তু তাকে দেখা করতে না দেওয়ায়, তিনি ঘোষণা করেন যে যতক্ষণ না তাকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় ততক্ষণ তিনি স্টেশনের বাইরে থাকবেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনির আন্দোলন ১৮ দিন পার হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল রোববার (২৪ জুলাই) আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যোগ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জুনাইদ সাকী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। রনির আন্দোলনে সমর্থন দিতে রোববার বিকেলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে রেলের প্রধান গেট আটকে রেখে কাউকেই ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনাইদ সাকীসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী কমলাপুর যান। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। পরে তারা সবাই সেখান থেকে চলে আসেন।
সন্ধ্যায় রনিকে সঙ্গে নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজারকে সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ডা. জাফরুল্লাহকে বাধা দেন। ড. জাফরুল্লাহর পক্ষ থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার গেট খুলে দেয়ার অনুরোধ জানানো হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গেট খোলেনি। পরে, রেলের দুজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে দেখা করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভেতরে ঢোকানোর আশ্বাস দিয়ে চলে যান। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসেছি। তাদের সাহস জোগাতে এসেছি। স্টেশন ম্যানেজারকে জানিয়েছি বিষয়টি। কিন্তু তিনি দেখা করেননি। এ সময় কেউ আন্দোলন করতে আসলে চা খাওয়াব’ প্রধানমন্ত্রীর এ কথাকে উদ্ধৃত করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, স্টেশন মাস্টারের উচিত রনিকে চা খাইয়ে দেয়া। তিনি বলেন, রনির প্রত্যেকটা দাবি যুক্তিসংগত। তাকে আমি অভিনন্দন জানাই।
সে ৭ জুলাই থেকে সব নিপীড়ন অগ্রাহ্য করে এখানে অবস্থান করছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বলা উচিত যে আপনার এই ছয় দফাকে বাস্তবায়ন করব। আজকে দেখেন, রেলওয়ে পরিবহনের কাছ থেকে টিকিট পাব না, ব্ল্যাক থেকে টিকিট কিনতে হবে! এটা খুব কঠিন কাজ। ডিজিটাল একটা নিয়ম থাকতে পারে, দুইটা, তিন-চারটা টিকিট থাকতে পারে না। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পঁচা ডিম মেরে আন্দোলন বন্ধ করা যায় না, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়েও আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। আপনারা কয়জন আসবেন? পঞ্চাশ জন, পাঁচশ’ জন! আমরা আসব পাঁচ হাজার। আমাদেরকে দমাতে পারবেন না। তবে প্রায় ৬ ঘণ্টা স্টেশনের প্রবেশপথে অবস্থান নিয়েও রেল কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ না পেয়ে রাত ১১টার দিকে তারা কমলাপুর স্টেশন এলাকা থেকে চলে যান। রেলের অব্যবস্থাপনা দূর করা, ট্রেনের টিকিটে কারসাজি বন্ধসহ ৬ দফা দাবিতে গত ৭ জুলাই থেকে কমলাপুরে আন্দোলন করছেন রনি।
শুরুতে তিনি একাই অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও গত সোমবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গানের দল বিশ কুড়ি ‘আমাদের স্বপ্ন যেন সত্য হয়, মানুষের স্বপ্ন যেন সত্য হয় গান গেয়ে প্রতিবাদ জানায়। এর আগে, ছয় দফা দাবি পূরণ করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় দিলেও তাতে কাজ হয়নি। তাই আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) আবার অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে রনিসহ অন্য শিক্ষার্থীরা যান কমলাপুর রেলস্টেশনে। তবে, চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘বাধায়’ কমলাপুর স্টেশনে থাকতে না পেরে অবশেষে তারা সন্ধ্যায় শাহবাগে চলে যান। ছয় দফাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে’ শুক্রবার বিকেলে আবার কমলাপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে যান মহিউদ্দিন রনি। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করতে না দেয়ায় তিনি প্রধান গেটের সামনেই বসে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন।
এ সময় সেখানে আসা সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের কর্মী পরিচয় দেয়া এম এ সূর্য নামে এক ব্যক্তি রনিকে তার আন্দোলনের বিষয়টি পরিষ্কার করতে বলে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন। একপর্যায়ে সেখানে থাকা জনতা ওই ব্যক্তিকে ‘দালাল’ আখ্যায়িত করে ধাওয়া দেন। এ সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠে কমলাপুর স্টেশনের পরিবেশ। পরে পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। এ সময় রনি সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনের ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে নতুন ইস্যু তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এদিকে উপস্থিত সাধারণ মানুষ ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য সাংবাদিকদের বলেন, তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে ফেলেছে। তারা আমাকে মেরেছে। গতমাসে রেলের টিকিট কিনতে গিয়ে হয়রানির শিকার হওয়ার পর ঈদুল আজহার আগে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অনশন শুরু করেন মহিউদ্দিন। ১০ জুলাই ঈদের দিনেও তিনি অবস্থানে ছিলেন। এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন তিনি।
উল্লেখ্য, একই দিনে রনির ৬ দফা দাবির সমর্থনে স্টেশনে উপস্থিত হন প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী। স্টেশনের সব গেট বন্ধ থাকায় তারা স্টেশনের বাইরে রিকশা স্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। সেখানে তারা দুর্নীতিবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি ও ট্রেন যাত্রায় অনিয়ম বন্ধের দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রনি।