দেশজুড়ে বিস্তার করা মহামারী কোভিড-১৯ এর তাণ্ডবসহ নানা কারনে দীর্ঘ প্রায় চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পর সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। আর এরপর কমিটি ঘোষণার পর থেকেই রীতিমতো শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি উঠেছে টাকায় বিনিময়ে ‘পদ’ বিক্রিরও অভিযোগ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ও মহানগররের নতুন দুটি কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সাবেক নেতৃবৃন্দ ও তাদের অনুসারীরা।
শুধু প্রত্যাখ্যান করেই থেমে থাকেননি- টাকার বিনিময়ে আংশিক এই কমিটি ঘোষণার গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন তারা। ক্ষোভে ইতোমধ্যে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া একাধিক ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করেছেন জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জেলা ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন।
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি হয়েছেন মো. নাজমুল ইসলাম আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন রাহেল সিরাজ। অপরদিকে, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছেন কিশোয়ার জাহান সৌরভ ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন নাঈম হাসান।
কমিটির দায়িত্বশীলদের নাম ঘোষণার পর সভাপতির পদ পাওয়া দুটি বলয়ে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও ক্ষোভ দেখা দেয় সিলেট ছাত্রলীগের অন্য বলয়গুলোতে।
টাকার বিনিময়ে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার আলম সামাদ।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় তেলিহাওর থেকে তার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিল শেষে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “জেলা ও মহানগর কমিটির শীর্ষ ৪টি পদ ৩০ লাখ করে মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যাদের পদ দেওয়া হয়েছে তারা কোনও ছোট গাড়ি স্ট্যান্ডের কমিটি পরিচালনারও যোগ্যতা রাখেন না। এছাড়াও তারা অছাত্র।”
জানা গেছে, নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই ছাত্রলীগের একাংশের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। তেলিহাওর গ্রুপের রাহেল সিরাজ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেলেও গ্রুপের অভ্যন্তরে অসন্তোষ চরমে পৌঁছায়। তেলিহাওর গ্রুপের বড় অংশের নেতাকর্মীরা রাহেল সিরাজের পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চেয়েছিলেন জাওয়াদ ইবনে জাহিদ খানকে। কিন্তু জাওয়াদকে সাধারণ সম্পাদক না করে কেন্দ্রীয় সদস্য করায় গ্রুপটির নেতাকর্মীরা বিকাল ৪টায় তেলিহাওর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে তারা জেলা ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের নাম ধরে কটুক্তিমূলক নানা স্লোগান দেন।
মিছিলটি নগরীর জিন্দাবাজার আল-হামরা মার্কেটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ মিছিলকারীদের বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে মিছিলটি সামনে অগ্রসর হয়। চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কিছু সময় সড়ক অবরোধ শেষে ফিরে যান তারা।
অপরদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহানগর কমিটিকেও প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করেছেন নেতাকর্মীদের একাংশ। বিকাল সাড়ে ৫টায় মহানগর ছাত্রলীগের ‘বিদ্রোহী অংশ’ নগরীর চৌহাট্টা এলাকার সড়ক ও জনপথ বিভাগের ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে সেটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে এসে এক সভায় মিলিত হয়।
এ সময়ে নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তারা। তাদের দাবি, টাকার বিনিময়ে কমিটির শীর্ষ পদ বিক্রি করা হয়েছে। এবং সেই স্থানে জামাত-শিবির কর্মীদের জায়গা দেয়া হয়েছে বলেও দাবি জানান তারা। তবে এ ঘটনায় কেন্দ্রিয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে এখনো কোনো-কিছু জানা যায়নি।