বিশ্বের কয়েকটি দেশের প্রায় বছরজুড়ে ভ”য়াবহ টর্নেডো আঘা”ত আনে যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এধরনের টর্নেডো বাংলাদেশের প্রায় হয় না বললেইও চলে। তবে এবার বাংলাদেশেই দেখা দিলে ভ”য়ানক এক বিরল টর্নেডো। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাকালুকি হাওরের উপর এবার এমনই এক টর্নেডো দেখা গেল, যেটা যেটা লেকের পানিকে স্তম্ভাকারে আকশে উঠিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে।
একটি জল স্তম্ভ হলো জল দিয়ে তৈরি একটি স্তম্ভ যেটা সাধারনত টর্নেডো দ্বারা সৃষ্ট হয়। যখন কোনো জলাশয়ের উপর একটি শক্তিশালী টর্নেডো ঘটে, তখন উচ্চ গতির ঘূর্ণায়মান বাতাসের টানের কারণে টর্নেডোর কেন্দ্র বরাবর একটি স্তম্ভাকার ঘূর্ণনে জলাশয়ের জল উপরে উঠে যায়। একে বলা হয় জলস্তম্ভ বলে।
শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের চাতলবিল এলাকায় এমন পানির স্তম্ভ দেখা গেছে। হাকালুকিতে এমন দৃশ্য খুবই বিরল।
স্থানীয় বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন জসিম দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, কয়েক বছর আগে হাকালুকিতে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল এমনটিই শুনেছেন। এরপর এমন ঘটনা আজই শুনলাম। এই জল স্তম্ভের দ্বারা কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বিকেলে ঘণ্টাখানেক থেকে পরে অন্ধকারে বিলীন হয়ে যায় এটি।
স্থানীয়রা জানান, এই টর্নেডোতে হাকালুকির পানি জোয়ারের মতো ফুলে ওঠেছিল। আকাশ কালচে বর্ণ ধারণ করেছিল এবং বজ্রপাতের মেঘ শুরু হয় এবং সেখানে গগন বি”দারী আওয়াজ হতে থাকে। জল আর আকাশের মধ্যে তৈরি হওয়া জলস্তম্ভ হাকালুকির তীরবর্তী লোকজন কৌতূহল ভরে প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় হাওড়ে উপস্থিত অনেকেই ছবি তুলে ও ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘূর্ণি তুফানের মতো পানির স্তম্ভটি পানি শুষে নিয়ে আকাশে উঠতে থাকে। জলের উপরি পৃষ্ঠে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়।।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, জলাশয়ের জল শুষে নিয়ে সৃষ্ট টর্নেডো শক্তি সঞ্চার করতে পারেনি। এই কারণেই এটি ছেড়ে দেয়। অন্যথায় বিপর্যয় হতে পারত। মাটিতে ছুঁলেই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতো।
সিলেটের আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাইদ চৌধুরী গনমাধ্যমকে বলেন, জলাশয়ে যা দেখা গেছে তা মূলত টর্নেডো। এই ধরনের টর্নেডো কমপক্ষে ১০/১২ কিলোমিটার বিস্তৃত হয়। এটা আরও বিস্তৃত হতে পারতো।”
তিনি আরও বলেন, “যে ভিডিওটি রেকর্ড করেছে, সে এর ভয়াবহতা কল্পনাও করতে পারেনি, যদি এর ঘূর্ণন গতি প্রসারিত হতো তাহলে তাকে নৌকাসহ উড়িয়ে নিতে পারতো। কয়েক বছর আগে নেত্রকোনা হাওয়ারেও ১০/১২ কিলোমিটার জুড়ে থাকা এ ধরনের টর্নেডো তৈরি হয়েছিল। তবে সেবারও শক্তি সঞ্চার ঘটাতে না পারায় তাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। একইভাবে হাকালুকি হাওরেও পানি প্রবল বেগে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এটা অন্য কোন দিকে গেলে বিপর্যয় হতে পারতো।”
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ইস্যুতে একটি সেমিনারে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন জাপানের কাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শি তাই চি হায়াশি। বিষয়টি দেখতে তিনি ও আরেক বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ সিলেট পৌঁছেছেন। রোববার তারা হাকালুকি হাওয়ারে যাবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা। জানা গেছে এর আগেও বেশ বিস্তৃত জায়গা জুড়ে এ ধরনের টর্নেডোর সৃষ্টি হয়েছিল যেটা হাওরের পানি একইভাবে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যায়। প্রবল ঘূর্ণিবাতের সৃষ্টি হলে এভাবে পানি আকাশে উঠে যায়, যেটা সেখানকার মানুষের জন্য একটি বিরল দৃশ্য উপভোগের বিষয় সৃষ্টি করে।