সম্প্রতি সয়াবিন তেলের দাম লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাওয়ায় সাধারন মানুষ ব্যাপক দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। একে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের কারনে কর্মহীনসহ নানা সমস্যায় ভুগচ্ছে তার মধ্যে ভোজ্য তেল সয়াবিনের দাম বাড়ায় ম/রার উপর খাঁড়ার ঘা। মধ্য বিত্ত ও নিন্ম বিত্ত মানুষ জীবন যাপনে ব্যাপক ভুগান্তিতে পড়েন তেলের দাম বৃদ্ধিতে। বিশ্ববাজারসহ নানা বিষয় বিবেচনার মাধ্যমে তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়া হয়েছে।
বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় বাজারেও দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৮৫ টাকা। যা আগামীকাল সোমবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
গত এক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যেটির দাম লিটার প্রতি ২০ কমল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) একেএম আলী আহাদ খান দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমেকে নিশ্চিত করেছেন যে আগামীকাল, সোমবার বা যেকোনো সময় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি বলেন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনারস অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন আনুষ্ঠানিকভাবে এই হারে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেবে। আজ রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং ভোজ্যতেল আমদানি, পরিশোধন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক-প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে সর্বসম্মতিক্রমে তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৯৯ টাকা। তা কমে ১৮৫ টাকা হবে। খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৬৬ টাকা আরো কম দামে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে প্রতি লিটার পাম তেলের নতুন দাম হবে ১৪৮ টাকা। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৪ টাকায়। অর্থাৎ খোলা তেলের দাম বোতলজাত তেলের চেয়ে কম হারে কমবে।
গত ২৬ জুন তেলের দাম লিটার প্রতি ৬ টাকা কমে ১৯৯ টাকা হয়। তবে সরকার দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে ক্রেতারা আগের দাম ২০৫ টাকায় কিনতে বাধ্য হয়েছেন।
নতুন চালান না আসা পর্যন্ত এই তেলের দাম কমানো যাবে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়ানো হয়।
বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের পরিস্থিতির উন্নতির পর থেকে আন্তর্জাতিক ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল। এক বছরেরও কম সময়ে দাম দ্বিগুণ হওয়ার প্রভাব দেশে অনুভূত হচ্ছে।
২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ৭৬৫ ডলার প্রতি টন। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের দাম ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার প্রতি টন। চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। তখন প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১৫৩ টাকা হিসেবে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা।
এক বছর আগে বোতলজাত তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৩৪ টাকা। চলতি বছরের ৯ জুন বাজেট ঘোষণার দিন সব শেষ তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই দিন বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৫ টাকা।
তেল নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার এ হার কমেছে প্রতি টন ১ হাজার ৩১৮ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ডলারের হারে (৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা) প্রতি লিটারের দাম দাঁড়ায় ১১৩ টাকা। এর সাথে যোগ করা হবে জাহাজের ভাড়া, পরিশোধন, বোতলজাতকরণ, বিপণন, আনুষঙ্গিক ব্যয় এবং লাভ।
তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে যতটা দাম কমেছে, তা কমানো সম্ভব নয়। কয়েক মাস আগেও প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে ঋণপত্র খোলা যেত। এখন তা ৯৪ টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসেবে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানির দাম ১০ শতাংশের বেশি পড়ে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমায় দেশের বাজারে তেলে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আগামি কাল থেকে হতে পারে বলে সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।