সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়ে বয়সে ছোট এক তরুণকে বিয়ে করেন ওই শিক্ষিকা। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি পিছনে ফেলে ওই তরুণের সাথে সংসার শুরু করেন শিক্ষিকা। তবে বয়স ছোট ওই তরুণকে বিয়ে করায় বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় তাকে অনেক হেনস্তা ও কুটুক্তির স্বীকার হতে হয়। ছাত্রকে বিয়ে করা সেই শিক্ষকের মৃ/ত্যু প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিন যা বললেন।
নাটোরে কলেজছাত্রকে বিয়ে করে আলোচনায় আসা শিক্ষক খাইরুন নাহারের লাশ উদ্ধারের পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি ‘আ/ত্মহত্যা’ করেছেন নাকি ‘হত্যার’ শিকার হয়েছেন। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
রোববার (১৪ আগস্ট) মধ্যরাতে ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড আইডিতে খায়রুন নাহারের মৃ/ত্যু নিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন তসলিমা নাসরিন। তার স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো-
“অধ্যাপক খায়রুন নাহারকে তার বয়সে ছোট স্বামী মামুন শ্বাসরোধ করে হ/ত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। স্বামী কেন বয়সে ছোট, এটা ছিল খায়রুনের অপরাধ। পুরুষরা যখন অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে করে, তখন মানুষ সেই পুরুষদের অপমান করে না! এখন তো লোকে বলবে, পুরুষকে স্ত্রীর চেয়ে বয়সে বড় হতেই হয়- এটিই সমাজের নিয়ম। না, এটা সমাজের নিয়ম নয়, এটা নিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু এক তুড়িতে নিয়ম বদলে যেতে পারে। নিয়ম মানুষই তৈরি করে, নিয়ম মানুষই ভাঙে।
স্ত্রী বয়সে বড় হবে, এটি যদি মানতে না পারো, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রিয় নবীর সঙ্গে বিবি খাদেজার বিয়েও মানো না। তোমরা তো তবে মুসলমানই নও। তোমার নবী তোমাকে যে পথে দেখিয়েছেন তুমি সেই পথে চলতে চাও। তাহলে স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় স্ত্রীকে মেনে নিতে পারো না কেন? আমার মনে হয় না মানুষের মানা না মানা নিয়ে খায়রুন নাহারের কোনও সমস্যা ছিল। তিনি সমাজের লোকদের বদ চরিত্রের কথা জেনেই তো মামুনকে বিয়ে করেছিলেন। এমন আত্মবিশ্বাস যার, তিনি আত্ম/হত্যা করবেন কোন দুঃখে!
ময়নাতদন্ত বলছে তাকে শ্বাসরোধ করে হ/ত্যা করা হয়েছে। মামুন তার স্ত্রীকে হ/ত্যা করে রাত ২টায় বাসা থেকে বের হয়ে সকাল ৬টায় ফিরে এসে ফ্যানের সাথে ওড়না ঝুলিয়ে ওড়না ও ফ্যানের কিছু অংশে আগুন ধরিয়ে একটি আত্ম/হত্যার দৃশ্য হয়তো সাজিয়েছেন। হয়তো রাতে যেখানে ছিলেন, সেখান থেকেই এই বুদ্ধিটা নিয়ে এসেছেন।
যেহেতু খায়রুনের ওপর সমাজ ক্ষিপ্ত ছিল, মামুনকে বয়স্ক নারীর ভিক্টিম হিসেবে দেখেছে। তাই মানুষ হয়তো চাইবে না মামুনের শাস্তি হোক। কৌশলে মামুনকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মামুন খায়রুনকে কেন হ/ত্যা করবে? খায়রুনের দয়ায় সে খাবার, বস্ত্র ও বাসস্থান পেয়েছে। এমনকি একটি মোটরসাইকেলও পেয়েছেন, পড়াশোনার খরচও পেয়েছেন। খায়রুন বেঁচে থাকলে আরও সুযোগ পেত। নিশ্চয়ই খায়রুনকে হ/ত্যা করার একটা অসৎ উদ্দেশ্য ছিল তার। আমার ভুল হতে পারে. কিন্তু খবরটা শুনে মনে হলো।
প্রসঙ্গত, সমাজ ব্যবস্থায় পুরুষ যদি কম বয়সি মেয়ে বেয়ে করতে পারে তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না বলে অভিযোগ করেন তসলিমা নাসরিন। তিনি বলেন, এটি সমাজ ব্যবস্থার সমস্যা ওই শিক্ষিকার নয়।