সম্প্রতি হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহা বিভিন্ন কারনে হতাশাগ্রস্থ হয়ে আ/ত্মহনন করেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় বিভিন্ন মহলে। তার আত্মহননের কারন খুঁজতে গিয়ে অনেক বিষয় উঠে আসে গনমাধ্যমে। প্রাইভেট পড়তে কৌশলে বাধ্য করা হতো শিক্ষার্থীদের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী পারপিতা ফাইহা অসুস্থতা নিয়ে দ্বিতীয় সাময়িকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফল এলেও উচ্চতর গণিত, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করে সে। এ কারণে শোভন রোজারিও নামের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক ফাইহার মাকে নিয়মিত ফোন করে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর প্রস্তাব দিতেন।
শিক্ষক কঠিন প্রশ্ন তৈরি করে এবং ফলাফলে বিপর্যয় ঘটিয়ে প্রাইভেট টিউটরিংকে উৎসাহিত করতেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গত মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ডিআইএর ঢাকা বিভাগীয় শাখার উপ-পরিচালক মো. রেহানা খাতুনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির আরেক সদস্য শিক্ষা পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন।
গত ২৩ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি ১২ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আ/ত্মহত্যা করেন স্কুলছাত্রী পারপিতা ফাইহা। সে হলি ক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন রোডে নন্দন রোকেয়া নামে ১২ তলার অ্যাপার্টমেন্টে এ ঘটনা ঘটে।
ডিআইএর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা রাজধানীর মণিপুরীপাড়ার একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে মেধাবৃত্তি পেয়েছিলেন। এরপর তিনি হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়। এখানে সে বরাবর ভালো ফলাফল করলেও নবম শ্রেণিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও গণিতে ফেল করে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন অনেক কঠিন করা হয়েছিল। এটি এত কঠিন করা হয়েছিল যে, সংশ্নিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের পক্ষে তা তাৎক্ষণিক সমাধানও প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রথম অস্থায়ী পরীক্ষায় নবম শ্রেণির মোট ১০৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন অকৃতকার্য হয়েছে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ৪০ জন অকৃতকার্য হয়েছে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হতাশাজনক ফলের পরও কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।
রিপোর্ট অনুযায়ী, শোভন রোজারিও সপ্তম, নবম ও দশম শ্রেণির উচ্চতর বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। তিনি নিজ স্কুলের এ তিন স্তরের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ান। যেসব ছাত্রী তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়বেন না, তাদের ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে দেওয়া হয় বলে পারপিতার সহপাঠীরা দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, ওই শিক্ষার্থী পরিক্ষায় ভালো না করায় আস্তে আস্তে হতাশায় পড়ে যায়। যার এক পর্যায় এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।