বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সব সময় আওয়ামী লীগ ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে আর এমনটা দেখা গিয়েছে শুরু থেকেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বানভাসীদের সকল রকম সহযোগিতা করতে নিতে নিয়েছেন সব ধরণের ব্যবস্থা। সম্প্রতি জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বন্যা নিয়ে ঘাবড়াবেন না, আওয়ামী লীগ জনগনের পাশে আছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুরে সিলেট সার্কিট হাউসে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে কোনো দুর্যোগে সর্বদা জনগণের পাশে আছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সব সময় দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন, তাদের জন্য কাজ করছেন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্য যেকোনো দুর্যোগে আমরা সব সময় জনগণের পাশে আছি এবং জনগণকে সাহায্য করে যাবো। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যেকোনো দুর্যোগে অন্যদের চেয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছায়। সর্বোপরি আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ইতিমধ্যে আমার অফিসকে বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে বলেছি। প্রায় দেড় মাস আগে সবাইকে বলতাম, এবার বড় বন্যা আসবে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একটি প্রাকৃতিক পরিস্থিতি দেখে অনুমান করা যায়। সেটা দেখে আমি সব সময় বলি এবার বড় বন্যা হবে। এ কারণে বন্যার সময় খাদ্য গুদামে পানি প্রবেশ করতে পারে বলে আগেই খাদ্যমন্ত্রীকে বলেছি। তার জন্য পানি সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে, পাম্প থাকতে হবে। বিশেষ করে খাদ্য গুদাম ও সার রক্ষা করতে হবে। আবার খাদ্য গুদাম থেকে সহজেই খাবার বের করে আনা যায়। এগুলো আমাদের সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গেছে যেখানে অনেকেই পৌঁছাতে পারেনি এবং সেখানকার ছবি তাকে পাঠিয়েছে যা উদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করেছে। “সেই ছবি আমি সেনাপ্রধানের কাছে, আমাদের অফিসে, বিভাগীয় অফিসে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করেছে।” সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেট সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার বন্যা ও এর ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা করেন।
বিভাগীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চারটি জেলার ৩৩টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেখানে ৪৫ লাখের বেশি মানুষ বন্যার পানিতে ডুবে আছে এবং ৪ দশমিক ১৪ লাখের বেশি মানুষ ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
এ ছাড়া বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য তিন শতাধিক মেডিকেল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ টন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বন্যায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং ৪০ হাজার পুকুর ও হেচারি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যাতে আনুমানিক ১৪২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের মানুষের এই বন্যা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বেঁচে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। সেজন্য অবকাঠামোগত সব উন্নয়নের কথা মাথায় রাখতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, যতদিন পানি থাকবে, সরকার খাদ্য সহায়তা দেবে, একজন মানুষও না খেয়ে যাবে না। তিনি প্রশাসন ও দলীয় কর্মীদের মানবিক বিপর্যয় রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যা দুর্গতদের দেখতে সিলেট যান। মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ১০টার দিকে তিনি হেলিকপ্টারযোগে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে সিলেট সার্কিট হাউসে যান প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, বন্যায় প্রত্যেক বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পড়ে বিপাকে। সীমাহীন কষ্ট করতে হয় সহ্য যা সত্যিই খুব দুঃখজনক। মানুষ প্রয়াত হলেও মাটি দেবার জন্য পাওয়া যায় না এক টুকরো জমি। পানির স্রোতে ভেসে যায় সবকিছু।