একতরফাভাবে সরকার পতনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের ফল ঘরে তুলতে চায় বিএনপি। এ কারণে তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলনের মাত্রা আরও জোরদার করার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এএ প্রেক্ষাপটে নেতাকর্মীরা শঙ্কা উপেক্ষা করে মাঠে জোরদার করা এবং বিরোধী দলগুলোকে ভোটে থেতে বিরত রাখা- এই দুই চ্যালেঞ্জের দেখছে দলটি। এগুলো মোকাবেলায় চলছে নানা কার্যক্রম। আন্দোলন সফল করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই রাজপথে নামার বার্তা দেওয়া হয়েছে তৃণমূল-সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের। টানা অবরোধের পর হরতাল ডাকা হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোও হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন শীর্ষ নেতারা। এসবের পাশাপাশি বিএনপিও চায় বিরোধী দলগুলো তাদের পাশে থাকুক। তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এ তথ্য জানিয়েছেন।
বুধবার তফসিল ঘোষণার বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ছিল বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর। কারণ যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য জোর দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে চিঠি দিয়ে বিরোধে থাকা সব দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ‘রাজনৈতিক ঐক্যমত্য’ ছাড়াই তফসিল ঘোষণায় কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছে। নেতারা মনে করেন, সরকারের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ভালোভাবে নেয়নি। তাদের কাছ থেকে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ আসতে পারে। যা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের শক্তিশালী করবে।
গত ৫ দিন ধরে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। নেতাদের বিশ্লেষন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১ দিনের হরতাল ও পাঁচ দফা অবরোধ কর্মসূচি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
৪৮ ঘণ্টার পঞ্চম দফা অবরোধের পর আবারও দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। সরকার পতনের পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে কর্মসূচির সফলতার কথা জানিয়েছেন।
আসন্ন কর্মসূচি সফল হলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে চান হাইকমান্ড। বিশেষ করে ঢাকা শহরকে টার্গেট করে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সব সাংগঠনিক জেলার শীর্ষ নেতাদের ইতিমধ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে- যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থাকার।
আত্মগোপনকারী নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আন্দোলনে নামবে। সমমনা দল ও জোট একই কর্মসূচি দিয়েছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, অবরোধে তারা ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে পেরেছেন। কিন্তু রাজধানীর ভেতরে তেমন কঠোর কর্মসূচি পালন করা যায়নি। তাই হরতালের মতো কর্মসূচি জরুরি ছিল।
নেতারা বলেন, সরকার একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। এ কারণে তারা বিরোধীদের ওপর হা/মলা-মামলা এবং গ্রেপ্তার-নি/র্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরাও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সফল হচ্ছেন। এবারও আন্দোলন সফল হবে বলে তারা আশাবাদী। কারণ প্রতিটি কর্মসূচি ও পদক্ষেপ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নেওয়া হচ্ছে।
তাদের মতে, তফসিল ঘোষণার পর অধিকাংশ বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে তারা। তাদের মনোভাব ইতিবাচক। যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে তফসিল প্রত্যাখ্যানকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ইতোমধ্যে নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন দাবি থাকলেও সরকারের পদত্যাগের দাবিটি কমন।
প্রায় একই দাবিতে পৃথক কর্মসূচি পালন করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কাছাকাছি আসবে বলে আশা করছেন নেতারা। সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে। দলটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নানাভাবে কাজ করছে। বিএনপির কাছে তথ্য রয়েছে, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন করতে প্রলুব্ধ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তবে এটা করে কোনো দল নির্বাচন করা যাবে না বলে মনে করেন তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “দেশে গণতন্ত্র নেই। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা লড়াই করছি। আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। বিএনপির শান্তিপূর্ণ হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালনে জনগণ আজ রাজপথে নেমেছে, জনগণের বিজয় হবে এই আধিপত্যবাদী স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে।