Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার সরকার বিরোধী জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ, জানা গেল কারন

এবার সরকার বিরোধী জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ, জানা গেল কারন

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির আভ্যন্তরীন কন্দোলে দলের বিভক্তির প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয় জাতীয় পার্টিতে আবারও ভাঙ্গনের সুর। তবে জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক সরকার বিরোধী বক্তব্য রাজনীতিতে ভিন্ন মোড় নেওয়ার আভাস মিললেও সেটি সম্ভবনা নেই বলে তথ্য মিলেছে।আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে জাতীয় পার্টি যা বললেন শীর্ষ নেতারা।

সরকারের সমালোচনায় ‘গরম’ বক্তৃতা করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেই আছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। ‘সরকারবিরোধী’ বক্তব্যের কারণ দেখিয়ে জি এম কাদেরের সঙ্গে রওশন এরশাদ দ্বন্দ্বে জড়ালেও আওয়ামী লীগ এতে হস্তক্ষেপ করেনি। এ দ্বন্দ্বে সরকারের ভূমিকা না থাকায় জাপার আওয়ামী লীগপন্থিরা রওশন এরশাদকে সমর্থন না করে জি এম কাদেরের পাশে রয়েছেন।

জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে এসব তথ্য ও রাজনৈতিক সমীকরণ পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে অপসারণের পক্ষে নয় সরকারি দল। কিন্তু জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাকে সমর্থন দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। রওশনের পক্ষে দলীয় পদ হারানো মসিউর রহমান রাঙ্গার সরকারের কোনো সমর্থন নেই বুঝতে পেরে সুর নরম করেছেন। তাই ফিরতে চান জি এম কাদেরের সঙ্গে।

জাপা চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মাত্র। এতে সরকার জড়ায়নি। সরকার রওশন এরশাদের পক্ষ নিলে নিশ্চয়ই জাপার অধিকাংশ সংসদ সদস্য জিএম কাদেরের বিপক্ষে যেতেন।

রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের কয়েকটি দ্বন্দ্বে ভূমিকা রাখা এই নেতা জাপার সংকটের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বর্জন করলেও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর মতো দুই জ্যেষ্ঠ নেতা রওশন এরশাদকে সামনে রেখে দলের একাংশকে ভোটে নিয়ে যান। নির্বাচনের মাস দুয়েক আগেও কাজী জাফর আহমদের পক্ষে ছিলেন রওশন এরশাদ। প্রয়াত কাজী জাফর ছিলেন জাপার বিএনপিপন্থি নেতাদের মূল ব্যক্তি। জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুর পর দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুই আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু। সরকারের সবুজ সংকেত নিয়েই জাপার মহাসচিব হয়েছেন মুজিবুল হক চুন্নু। রওশন এরশাদের সঙ্গে এবারের লড়াইয়ে তাঁরা জি এম কাদেরকে সর্বাত্মক সমর্থন করছেন। মুজিবুল হক চুন্নু প্রকাশ্যেই রওশনপন্থিদের তুলাধুনা করে বক্তৃতা করেছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও গত বৃহস্পতিবার জার্মান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে জি এম কাদেরের বাসায় যান।

ওই নেতা দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু পরিস্থিতি বোঝার ‘ব্যারোমিটার’। তাঁরা জি এম কাদেরের পাশে থাকার অর্থ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমস্যা নেই। জাপা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন। ২০১৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃ/ত্যুর পর, রওশন এরশাদ সরকারের সমর্থনের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপিদের সমর্থন না পেয়েও জিএম কাদেরের দাবি প্রত্যাখ্যান করতে এবং বিরোধী দলের নেতা হতে সক্ষম হন। জিএম কাদেরের সর্বাত্মক বিরোধিতা সত্ত্বেও এরশাদের মৃ/ত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে রওশনপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ জাপাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলুরা সরকারের পাশে থাকায় সেবার রওশন এরশাদের সমর্থনে ছিলেন।

তবে এসব বিষয়ে গত চার দিনে বারবার চেষ্টা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জি এম কাদের বলেছেন, সরকারের সঙ্গে জাপার শত্রুতা বা বন্ধুত্ব নেই।

চুন্নু অবশ্য বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গেও আঁতাত নেই।’ সরকার রওশন এরশাদের পক্ষে থাকলে কি জাপার প্রায় সব এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্যের সমর্থন জি এম কাদের পেতেন- প্রশ্নে হেসে তিনি বলেন, ‘জটিল প্রশ্ন।’

জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জিএম কাদের জামানার নেতৃত্বে যারা দলে পদ হারিয়েছেন তারা রওশন এরশাদকে সামনে রেখে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে থাইল্যান্ডে আট মাস চিকিৎসা শেষে জুন মাসে দেশে ফেরেন রওশন এরশাদ। তিনি আবার থাইল্যান্ড ফিরে গেলে সেখান থেকে তাঁকে দিয়ে জাপার সভা আহ্বান করিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জি এম কাদেরের সরকারবিরোধী বক্তব্যকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ওই নেতাদের ধারণা ছিল, জাপার শীর্ষ নেতৃত্ব সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে সরকারের কড়া সমালোচনা করছেন, তাতে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে আওয়ামী লীগের সমর্থন মিলবে।

প্রায় সব ইস্যুতে সরকারের সুরে কথা বলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পেলেও হঠাৎ আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর জাপা। এ বিষয়ে ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এগুলো সমঝোতারই অংশ। বিএনপিও রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এমন সময়ে সরকার জিএম কাদেরের ব্যাপারে কঠোর হয়ে তাকে বিএনপির দিকে ঠেলে দেওয়ার কথা নয়। বিএনপি নির্বাচনে না এলে শূন্যস্থান পূরণ করবে জাপা জোট। শারীরিক অসুস্থতার কারণে আগামী নির্বাচনে রওশন এরশাদের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখা কঠিন। তাই জাপার নেতা জি এম কাদেরই।

রওশন এরশাদ যে চিঠিতে পরিষদকে ডাকেন তাতে বলা হয়, সরকারের বিরোধিতা করে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপা পদ্মা সেতুর মতো বড় অর্জনে অংশ নিতে পারেনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জাপাকে শক্তি অর্জন করতে হবে। ২৩ আগস্ট স্বাক্ষরিত চিঠিটি ৩১ আগস্ট প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতার সদস্য সচিব গোলাম মসীহ। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির ঘোষণা রওশনের এই সদস্য সচিব বলেন, ‘রওশন এরশাদের কারণেই জাপা নেতারা এমপি হতে পেরেছেন। এমপি হতে হলে রওশন এরশাদ লাগবে।’কতজন এমপি রওশন এরশাদকে সমর্থন করেছেন- প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ‘যাঁরা মনে করছেন জি এম কাদের এমপি বানাবেন, তাঁরা ভুল করছেন।’

তারা এই চিঠি প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় পরদিন সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকেছেন জিএম কাদের। এতে দলের ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৩ জন অংশ নেন। তারা রওশন এরশাদের স্থলাভিষিক্ত হয়ে জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান বিদেশ থেকে টেলিফোনে সম্মতি দেন। জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১ সেপ্টেম্বর স্পিকারকে চিঠি দেন মসিউর রহমান রাঙ্গা ও জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

কিন্তু স্পিকার এখনও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জি এম কাদেরকে স্বীকৃতি দেননি। এর তেমন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। জাপা কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ এমপি বলেন, ‘বিষয়টি জটিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেই হয় না।

দশম সংসদে জাপার ৪০ এমপির ৩৪ জনের সমর্থন পেয়েছিলেন কাজী ফিরোজ। পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বাক্ষরিত সমর্থনপত্রও পেয়েছিলেন। কিন্তু স্পিকারের স্বীকৃতি পাননি। রওশন এরশাদের বিরোধিতায় বিরোধীদলীয় উপনেতা হতে পারেননি কাজী ফিরোজ।

জাপা নেতারা জানান, রওশন এরশাদের কারণে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রতিমন্ত্রী হন মসিউর রহমান রাঙ্গা। সরকারের সঙ্গেও সখ্য রয়েছে। ওশন এরশাদের টেলিফোন পেয়ে পক্ষ বদল করেছিলেন। এক নেতা বলেছেন, ‘রাঙ্গা না বুঝেই লাফ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে লাফ দিয়ে দেখল তার পাশে কেউ নেই। তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন যে সরকার রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা রাখার পক্ষে কিন্তু জিএম কাদেরকে দূরে ঠেলে দিতে চায় না।

এ প্রসঙ্গে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘রওশন এরশাদের কারণে জাপা সংসদে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু সরকারবিরোধী বক্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই জি এম কাদের ও জাপার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।’ তবে তিনি এও বলেছেন, জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে মানেন ও সম্মান করেন।

প্রসঙ্গত, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টি কৌশল বদলাচ্ছে বলে অনেক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তবে আওয়ামীলীগ জাতীয় পার্টিকে পাশে রাখবে বলে অনেকের ধারনা।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *