Tuesday , September 17 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না, জানা গেল কারন

এবার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাংকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না, জানা গেল কারন

সরকারি সংস্থাগুলোও সময়মতো ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধ করছে না। ফলে সরকারি সংস্থার কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের কাছে ৩০টি সরকারি সংস্থার পাওনা ছিল প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের কাছে সরকারি সংস্থার পাওনা প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। বছরের পর বছর এ ঋণ বাড়ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে ৩০টি রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের মধ্যে ২৪টির বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪৮,৩৬২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সবচেয়ে বেশি পাওনা ৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির ঋণ রয়েছে ৮৯৭৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পে ঋণ নেওয়ায় এ অবস্থায় রয়েছে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে ৮০৫৬ কোটি টাকা। এসব ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ খেলাপি। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) ১২টি কোম্পানির লোকসান দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪ কোটি টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, লোকসান বেড়ে যাওয়ায় সরকারি সংস্থাগুলো ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ খাতের ব্যাপক লোকসান না হলে এ অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা যেত। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত দুই বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণ বেড়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা। জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৭হাজার ৪৭৮কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এই ঋণের সিংহভাগ নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৫হাজার ৬৬ কোটি ৭২লাখ টাকা। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) পাওনা ১ হাজার ৪৭কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি) থেকে ব্যাংকগুলো পাবে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। বিবিসিকে 5 হাজার 255কোটি 95লাখ টাকা।

এ খাতের আরেকটি কোম্পানি বিআইডব্লিউটিসির পাওনা ৫৮৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে (সিপিএ) ৪৬৬ কোটি টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১হাজার ৩৪২কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৮৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসার পাওনা ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিডব্লিউডিবি) কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৫৬৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে ব্যাংকটির পাওনা ২০০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডকে (বিটিবি) ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) কাছে ব্যাংকটির পাওনা ৯৭ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিজেএমসির সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫৮ কোটি ২০লাখ টাকা। এছাড়া বিএডিসির কাছে ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, বিটিএমসির কাছে ২০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা এবং বিটিবির কাছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি)।

কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ১হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা। লোকসানের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। কোম্পানিটির লোকসান বেড়েছে ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) লোকসান হয়েছে ৮৮২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) লোকসান হয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের লোকসান ৩০৮ কোটি। এতে বিআরটিসির লোকসান হয়েছে ১০১ কোটি টাকা। এতে বিএফডিসির লোকসান হয়েছে ২২ কোটি টাকা। বিআইডব্লিউটিএর লোকসান ৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশন (বিটিএমসি) ১৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। বিআইডব্লিউটিসি ১৩ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ক্ষতি হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত দুই বছরে পাওনা বেড়েছে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ১১১ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে লোকসানে রয়েছে অন্তত ১১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২২ পর্যালোচনায় প্রাপ্ত তথ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। উল্টো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের লোকসান টেনে নিচ্ছে সরকার। ফলে বছরের পর বছর ব্যাংকে টাকা ফেরত দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো।

 

About Syful Islam

Check Also

হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণের আর পাঁচ দিন, বিপাকে ভারত

আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলেছে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ। বর্তমানে, কূটনৈতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *