Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার সরকারি দলের মাঠে নামা রাজনীতিতে কিসের ইঙ্গিত

এবার সরকারি দলের মাঠে নামা রাজনীতিতে কিসের ইঙ্গিত

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সক্রিয় হচ্ছে। তবে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বড় দুটি দল ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। বিগত দুটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফাঁদে আর পা দিতে রাজি নয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে আবারও দলীয় সরকারের নির্বাচন করতে অনড়। সমাধান রাজ পথেই হবে এমন কথাই বলছে দুটি দল।

দশকের পর দশকজুড়ে অসহিষ্ণু, নির্মম ও সহিংস রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অতীত ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে কয়েক সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নেতাকর্মীদের যে চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তা আমাদের নতুন যুগের সূচনা ভেবে আনন্দিত ও উৎসাহিত করেছিল। প্রতিটি দেশেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে বা বাগ্‌বিতণ্ডা ও পরস্পরের সমালোচনা থাকে। তবে আমাদের মতো অনেক দেশে পরস্পর বিরোধিতা সহিংস রূপ নেয়। এই সহিংসতার ভয়ংকর ও নৃশংস রূপ আমরা দেখেছি ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। প্রধানমন্ত্রীর চায়ের দাওয়াত এই বৈরিতাকে পেছনে ফেলে অসহিংস এবং আলাপ-আলোচনা ও বাগ্‌বিতণ্ডার রাজনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনালগ্ন হিসেবে সবাইকে আশান্বিত করেছিল।

তবে দুর্ভাগ্যবশত অস্বীকার করার কিছু নেই যে সবার আশা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ইতোপূর্বে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশিরভাগই বিরোধী দলকে দমন করতে খলনায়কের হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী সমাবেশ, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, এমনকি গোলাগু/লি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখতিয়ারভুক্ত বলে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।

প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আমন্ত্রণের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের লাঠিপেটা ও মামলার ভূমিকা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসবে। হয়তো কিছুটা সরেও এসেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদে এখন যেটা ঘনঘন দেখা যাচ্ছে, তাহলো সরকারি দল এবং তাদের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, তারা দলীয় কার্যালয়, বাসভবন এমনকি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হা/মলা চালিয়ে লাঠিপেটা করে বিরোধী সভা, মিছিল ও মানববন্ধন ভাঙচুর করছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপদল ও তাদের অনুসারীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর হা/মলা চালাচ্ছে।

আশঙ্কা হয়, সরকারি দলের নেতাকর্মীদের এভাবে তথাকথিত মাঠে নামার পরিণতি পুরো দেশের জন্যই ভীষণভাবে অমঙ্গলকর হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী সরকারের দেশে প্রথমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তারপর সরকারি দল, তারপর সরকারি দলের সংগঠন বিরোধী দলকে শায়েস্তা করতে মাঠে নামে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হলো সরকারি দলের বিভিন্ন উপদল বা ভিন্ন ভিন্ন নেতাদের অনুসারীরা এবং তারপর অঙ্গসগংগঠনের বেলায়ও এই হানাহানি ছড়িয়ে পড়ে। এই তৃতীয় পর্যায়ে এসে সাধারণ জনগণ, যাদের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তারাও নির্বিচারে এসব হানাহানি, সহিংসতা, লুটপাট, চাঁদাবাজির শিকার হতে শুরু করেন। ততক্ষণে, আইনের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, আদালতেরও খুব বেশি কিছু করার থাকে না। আর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তখন সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগে পড়ে।এই তৃতীয় পর্যায়টা প্রথম দুই পর্যায়ের অনেকটা অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বা ফলাফল।

তৃতীয় পর্যায়টি বিভিন্ন দেশে এক বা দুই বছর বা কিছু দেশে এক দশক বা এক যুগ স্থায়ী হয়। কিন্তু এটি বিদ্যমান ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে শেষ হয়। আশা করি এই দেশ তৃতীয় পর্যায়ে যাওয়ার আগে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে অর্থাৎ রাজনীতিতে সংলাপ বা মতবিনিময় ফিরিয়ে আনবে এবং যারা সহিংসতা করে তাদের বন্ধ করবে। বিরোধী দলেরও দায়িত্ব হলো এই মতামত বিনিময়ে আলাপ-আলোচনায় সক্রিয় অংশ নেওয়া এবং প্রতিটি ছুতায় সরকারকে উৎখাত করার হুমকি-ধমকি থেকে কিছু কালের জন্য হলেও বিরত থাকা।

প্রসঙ্গত, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মন্তব্য করছে। তবে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বেশ জরে সরে মাঠে নামার বিষয়টি অশুভ সংকেত বলে মনে করা হচ্ছে।

About Babu

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *