আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সকল রকমের পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানায়। সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন করা নির্বাচনের মূল লক্ষ বলে মন্তব্য করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহন না করলে বিশেষ করে বিএনপি অংশ না নিলে নির্বাচন গ্রহনযোগ্য হবে না। নির্বাচনে অ/স্ত্র নিয়ে মাঠে নামার বক্তব্যকে প্রসঙ্গে এবার ক্ষমা চেয়ে যা বললেন (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে তা প্রতিরোধ করতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়াতে হবে- এমন বক্তব্য দেওয়ায় এবার ক্ষমা চাইলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আমরা কখনো কখনো ভুল করে ফেলি।
এজন্য আমি অনুতপ্ত।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) নির্বাচন ভবনে ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে বসে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমাদের কিছু ক্ষমতা থাকবে, আমরা নির্বাচনে ব্যবহার করব। কিন্তু আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে যেতে পারবো না। কেন্দ্রে আপনাদের অবস্থান নিতে হবে। একান্তভাবে কামনা করবো যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, শক্তিশালী দল থাকবে, দুর্বল দলও থাকবে। এখন শক্তিশালী দলের একজন এবং দুর্বল দলের তিনজন থাকলে সম্ভাব্য সহিংসতা অনেকটাই রোধ করা যাবে। আপনারা যেটা বারবার বলছেন অর্থশক্তি, পেশিশক্তি এসবের সঙ্গে অ/স্ত্রশক্তি; বিভ্রান্ত সৃষ্টি হয়েছে পরশুদিন যা বলেছি তা নিয়ে- সেটা হলো কেউ ত/লোয়ার নিয়ে এলে ব/ন্দুক নিয়ে আসবেন। এখন আপনাকে বুঝতে হবে যে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কথাটা কখনো মিন করে বলতে পারেন না।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমি হয়তো কম শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত মানুষও এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। ববি হাজ্জাজের কথার পিটে হেসে বললাম বন্দুক নিয়ে দাঁড়াবেন। এটা হচ্ছে কথার পিঠে কথা। এটা কখনই সিইসি বলতে পারে না। যদি মিন করতে পারতাম তবে আমি প্রতিনিয়ত বলতাম আপনারা অ/স্ত্র সংগ্রহ করুন। আপনারা নিজেদের শক্তিশালী করুন। আমরা অনেক সময় হিউমার বা কৌতুক করে ফেলি।
তিনি বলেন, আমরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমরা যত আলোচনা করেছি, কিছু গোপন করিনি। আমাদের কথা ও ছবি বাইরে স্ক্রিন দেওয়া আছে, সেখানে যায়। আমাদের সাংবাদিকরা কেন এমন করলেন, বুঝে নাকি না বুঝে! তাদের প্রতি আমার এখনো শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু এতে করে আমার মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।
সিইসি বলেন, আপনি এটা বিশ্বাস করেন, আমার বাবা বেঁচে থাকলেও বিশ্বাস করতেন যে কেন আমার ছেলেকে এমন বাজে পরামর্শ দিলেন! মা বলতেন বাবা কেন এমন বাজে পরামর্শ দিলেন? আমি বলব যে, কখনো আমরা ভুল করে থাকি, এজন্য আমি অনুতপ্ত।আমি হিউমার করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে প্রচার না করে যদি বস্তুনিষ্ঠভাবে, বলা হতো হিউমার করেছেন। আমি এটা মিন করিনি। এজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।
তিনি বলেন, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমরা সৎ, আমার সহকর্মীরা আছেন। সবাই কঠিন অবস্থানে আছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করবো।
দলগুলোর উদ্দেশে সিইসি বলেন, আপনারা নির্বাচন করবেন। সিইসি হিসাবে, আমি আপনারাও আন্তঃদলীয় সংলাপ এবং মিটিং করার জন্য অনুরোধ করব। কিছু কিছু প্রশ্নে মোটাদাগে ঐক্যমতে পৌঁছার চেষ্টার করেন। কারণ এটা একটা বড় সমস্যা। টাকা, পেশিশক্তির কথা আসছে। দ্রুত সমাধান না হলে ইসির একার পক্ষে এটা করা কঠিন হতে পারে। এজন্য আমি আপনার সাহায্যের জন্য অনুরোধ করছি।
আমাদের দায়িত্ব নির্বাচন করা। আমরা আইন মেনে চলতে বাধ্য। সরকারের সীমাবদ্ধতা কী হবে তা সরকারের কাছে উপস্থাপন করুন। আমি দ্বিমত পোষণ করি না। আমরা ভালো নির্বাচন করতে চাই। সব দেশেই নির্বাচনকালীন সরকার নিয়মিত কাজ করে। বর্তমান সরকারে যারা আছেন তারা রুটিন ওয়ার্ক করতে পারেন। আমরা তাদের জোর করতে পারি না।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। এতে সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সকালে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু দল আসবে না বলে জানিয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ মুসলিম লীগও সংলাপে অংশ নেয়নি। এ পর্যন্ত আট দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে ইসি। ৩১ জুলাই পর্যন্ত অন্য ২৯ টি দলের সঙ্গে ইসির বসার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন ইসি বলে মন্তব্য করেন সিইসি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করতে হবে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরামর্শ দেওয়া কথা জানান সিইসি।