জমি কেনার নামে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু কোটি কোটি টাকা বৈধ করার চেষ্টা করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন অভিজাত হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
একে অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। আবদুল হাই বাচ্চু, তার স্ত্রী-সন্তান এবং নামিদামি লা মেরিডিয়ান হোটেলের মালিক আমিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার সংগঠনটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি করেন। প্রথমবারের মতো দুদকের জালে ধরা পড়লেন বাচ্চুর স্ত্রী-সন্তান।
মামলার আসামিরা হলেন- বেসিক ব্যাংকের বিতর্কিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু, তার স্ত্রী শিরিন আক্তার, তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই, শেখ সাবিদ হাই অনিক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ৮ জুলাই আসামি শেখ আবদুল হাই বাচ্চু অপর আসামি আমিন আহমেদের সঙ্গে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট বাজার সংলগ্ন ৬ নম্বর প্লট ৩০.২৫ কাঠা কেনার চুক্তি করেন। জমির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী জমি দুটি দলিলে রেজিস্ট্রি করা হয়। যার মধ্যে ১৮ কাঠা জমির দাম উল্লেখ করা হয় ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর প্রথম নথিতে ৯ কোটি টাকা। যেখানে প্রাপক হলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু, শেখ শাহরিয়ার পান্না ও শিরিন আখতার।
একই বছর আরেকটি নথিতে ১২ দশমিক ২৫ কাঠার দাম ধরা হয়েছে ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যেখানে প্রাপক হলেন শেখ সাবিদ হাই অনিক ও শেখ রাফা হাই। জমির রেজিস্ট্রি মূল্য ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ নিবন্ধন মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কমিয়ে অবৈধ আয় আড়াল করার চেষ্টা করেন তিনি। এ ছাড়া জমির কম মূল্য দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ জমি বিক্রি ও বাজারদর গোপন করতে বাচ্চুকে সহায়তা করেন। ১৩৪টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু তাদের আয়কর নথিতে জমির দাম দেখানো হয়েছে ২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। অর্থাৎ শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আয়-ব্যয় এবং প্রকৃত সম্পদের মধ্যে বিরাট অমিল রয়েছে। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া ঋণ দিয়ে কমিশন বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।
আত্মসাৎ করা অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে গোপন করেছেন। তার এই অবৈধ অর্থের বৈধতা প্রদানে সহায়তা করেছেন লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ। যা অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে এই ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু সংসদ সদস্য হন। এরপর তাকে আর সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান আবদুল হাই বাচ্চু।
২০১২ সালে, যখন তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তিনি বেস্ট হোল্ডিং গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের সাথে বাড়িটি কেনার জন্য একটি আন্তরিক চুক্তি করেন। বায়না চুক্তি অনুযায়ী, জমির মালিক ৫ ব্যক্তি হলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু (৬.২৫ কাঠা), শেখ শাহরিয়ার পান্না (৬ কাঠা), শেখ শিরিন আখতার (২ কাঠা), শেখ সাবিদ হাই অনিক (৮ কাঠা) ওশেখ রাফা হাই (৮ কাঠা)। এই প্রথম বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরাসরি মামলা করল দুদক।