সম্প্রতি বিএনপি নেতাকর্মীরা সার্চ কমিটি গঠন হওয়ার পর থেকে তাদের নানামুখি কার্যক্রম নিয়ে সংশয় ভুগছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে জাফরুল্লাহর ভূমিকা সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেক বিএনপি নেতাকর্মী। বিএনপির( BNP ) নেতাকর্মীরা বলতে শুরু করেছেন, তিনি আদৌ বিএনপির( BNP ) সদস্য নন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী কাদের( Jafrullah Chowdhury Quader ) হয়ে কাজ করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেক বিএনপি নেতাকর্মী, ইসি গঠনের পরপরই তার ইতিবাচক মন্তব্য ক্ষুদ্ধতা প্রকাশ করেন বিএনপির( BNP ) বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা ও কাজ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা সংশয় তৈরি হচ্ছে। দলের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে হাইকমান্ড সন্দেহের চোখে দেখছে। মিঃ জিয়াং-এর হস্তক্ষেপের পর তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পূর্বের প্রচেষ্টা থেকেও তিনি বেঁচে গেছেন বলে মনে করা হয়। গত( Past ) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই এই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গঠনে জাফরুল্লাহর ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছে বিএনপি।বিশেষ করে সার্চ কমিটির আমন্ত্রণে সম্ভাব্য নাম দেওয়ার বিষয়টি তারা মানতে পারছেন না। তার মধ্যে ছিলেন নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল। সার্চ কমিটিতে তার দেওয়া নাম আওয়ামী লীগের( Awami League ) পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, জাফরুল্লাহর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে তাদের পছন্দের নাম দিয়েছেন বিএনপি। ড. হাবিবুল( Dr. Habibul ) আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর, ড. জাফরুল্লাহ( Dr. Jafrullah ) সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, হাবিবুল আউয়াল খুবই সৎ, অনুগত( Past ) মানুষ এবং সরকার তার ওপর অযথা চাপ না দিলে তিনি ভালো করবেন। সকলের উচিত তাকে সহযোগিতা করা। তার সনদ বিএনপির( BNP ) জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। জাফরুল্লাহর নামকরণ এবং তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে মনোনীত করা নিছকই কাকতালীয় ব্যাপার তা মানতে নারাজ তারা।
বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে ক্ষমতাসীনরা। প্রথমত, এটি বিএনপির( BNP ) একটি বিবৃতি দেওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে যে এটি প্রক্রিয়াটির সাথে নেই। দ্বিতীয়ত, প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে সরকারের( government ) পছন্দের ব্যক্তি দ্বারা নয়, সরকারের( government ) সমালোচনাকারী ব্যক্তির দ্বারা। সরকার এমন ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
জাফরুল্লাহর বক্তব্যের বিষয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি( February ) ময়মনসিংহ বিভাগের এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর( Mirza Fakhrul Islam Alamgir ) বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির( BNP ) সদস্য নন। তিনি যা বলেন তা তার নিজের বক্তব্য।নির্বাচন নিয়ে বিএনপির( BNP ) পক্ষে কেউ কথা বলবেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির( BNP ) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স( Syed Emran Saleh Prince ) বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দলের বিষয়ে যা-ই বলবেন তা সম্ভব হবে না। তার কথা ও কাজ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি আসলে কার হয়ে কাজ করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সার্চ কমিটিতে নাম দেওয়া এবং ইসি গঠনের পর ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন ড. জাফরুল্লাহর ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি। এ অবস্থায় জাফরুল্লাহকে বয়কটের সিদ্ধান্তের কথা জানান দলের হাইকমান্ড। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে সেখানে না যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইসিতে তার ভূমিকার পর জাফরুল্লাহকে পুরোপুরি বর্জনের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে দলের একাংশ মনে করেন, জাফরুল্লাহ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাকে এভাবে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। জনসমক্ষে এ ধরনের বিরোধ বাড়তে থাকলে দল নিজেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তারেক রহমান ইস্যুতে কিছুদিন ধরে ড. জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা মিডিয়ায় তার বক্তব্য সবার নজরে আসে। সরকারের নানা ব্যর্থতা উপেক্ষা করে তারেক রহমান ইস্যুতে তিনি বারবার বেশ সোচ্চার হয়েছেন। তার বক্তব্যের পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তার সামাজিক মর্যাদার কথা বিবেচনা করে বিএনপি সরাসরি তার সঙ্গে বিবাদে জড়াতে চায়নি। তাকে এড়াতে নানা কৌশল নেওয়া হয়েছে। তাকে এড়িয়ে চলার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও বিএনপি সমর্থিত কয়েকটি সংগঠন তাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছিল। এখন থেকে কেউ যেন তাকে দাওয়াত দিতে না পারে সেজন্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি থাকলে বিএনপি নেতারা দলে আসত না, অথবা বয়কট করত না, এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। যদি তারা মনে করে যে আমার সমস্যা আছে, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতার কারণে বিএনপি তাদের ভুল বুঝতে পারে নি।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমি বারবার বলেছি, তারেক, তুমি দুই বছর ধরে চুপচাপ বসে আছ, পারলে শিক্ষায় যুক্ত হও। বিলেতে পড়ালেখার অনেক উপায় আছে। তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বৈঠকে উপস্থিত ছাত্র সংগঠনের একাধিক নেতা।ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাওছার সালাম।জাফরুল্লাহ থেমে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা কারা বিএনপির? ‘বিএনপির কথা বললেন কেন?দলের নির্দেশ অমান্য করে ড. জাফরুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়কের পদ হারান জিএম সিরাজ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দরা বর্তমান পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। কারা তাদের বন্ধু কারা তাদের শত্রু সেটা তারা বুঝতে পারছে না। বিএনপি নেতাকর্মীরা, বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নিবেন, সেটা যদি এখনো না বুঝতে পারে ভবিষ্যতে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির ভিতরে পড়তে হবে তাদের।