আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন সমস্ত ধরনের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যাতে করে একটি সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন জনগণকে উপহার দিতে পারে এই নির্বাচন কমিশন। এদিকে এই নির্বাচন যেন বিতর্কিত না হয় এবং সবার নিকট গ্রহণযোগ্য হয়, সেজন্য তিনি প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনাদের সাথে আলোচনা করেন। এবার তিনি জেলা পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ডিসিদের নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ ও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করতে নির্দলীয় সরকার প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
রোববার বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের আলোচিত এ কমিশনার।
মাহবুব তালুকদার বলেন, বিগত কমিশনগুলোর সংলাপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমন্ত্রিত সুধীজন প্রায় একই ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। ইভিএম বা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়া এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ নয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বিশ্বমানের নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। পুলিশের কার্যক্রম কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের মধ্যে সংলাপ অনিবার্য। আমি যে রূপরেখা পেশ করেছি তা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি আসনে অধিষ্ঠিত সংসদ সদস্যদের আসন ধরে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ভাবনা ফালতু উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ না করলে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’, অর্থাৎ সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের তাদের নিজস্ব এলাকায় রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা হয়ে থাকে।
মাহবুব তালুকদার বলেন, জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বদলি করা দরকার। একচেটিয়াভাবে জেলা প্রশাসকদের যদি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিতে হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের আগেই তাদের বিভিন্ন জেলায় বদলি করতে হবে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সময় সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, মাহবুব তালুকদার ও আবু হাফিজ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসংগত, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে নানা ধরনের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেও আদৌ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে কিনা সে বিষয়ে ভাবছেন সাধারণ মানুষ। তবে পূর্বের নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচন অনেকটা সুষ্ঠু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।