প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাপক সাফল্য আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, সেই সাথে তিনি তার সাফল্যের জন্য দেশের বাইরে প্রশংসা অর্জন করেছেন। এবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরার চেষ্টা করে সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ও পীর ফজলুর রহমান। তাদেরকে তিনি বেশ কড়া জবাবও দেন সংসদে।
তার কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাফল্য-ব্যর্থতা যাচাই করার দায়িত্ব জনগণের, এমন মন্তব্য করে সংসদ নেতা বলেন, ‘জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে সততা ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করলে ব্যর্থ হবো কেন? কোথায় সফলতা, কোথায় ব্যর্থতা তা বিচার করবে জনগণ।
গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় সদস্য যখন এত আগ্রহী, তখন আপনারা আমার ব্যর্থতাগুলো খুঁজে বের করুন, আমি সেগুলো সংশোধন করবো।’
একেএম রহমতুল্লাহর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হ”/ত্যার পর জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যু’দ্ধাপরা”ধীদের মুক্ত করে দেয়। তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। সংবিধানের দুটি ধারা পরিবর্তন করে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। ভোটের অধিকার দেয়। তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে চায়নি।
‘বাংলাদেশের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখতে হবে- এখানে গেরিলা যু”/দ্ধ হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির মুরব্বিকে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হতে হয়েছে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে। অ”স্ত্র রাখতে দেয়।
মেয়েরা রান্না করে খাইয়েছে। অভিযান চালিয়েছে। এ কারণেই জাতির পিতা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু যারা গণহ”/ত্যা, অ”গ্নিসংযোগ, লু”/টপা’ট ও নারীদের সাথে খারাপ কাজ করেছে, তাদের বিচার তিনি করেছিলেন। কিন্তু পনেরো-পরবর্তী বছরে সব বদলে গেল। মনে হচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধ করে অপ”রাধ করেছে। কিন্তু বর্তমানে সেটা হচ্ছে না।
ইতিহাস বিকৃতকারী কাকে রেখে কার বিচার করব?
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা ইতিহাস বিকৃত করেছে, আমি যদি ১৯৯৬-এ ফিরে যাই, তা হলে কাকে রেখে কার বিচার করব- এটি হলো বাস্তবতা। আমি দেখতে পাচ্ছি যে ‘৭৫ এর পর সবাই, এমনকি যারা সত্য জানত তারাও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এটা দুর্ভাগ্য. রেডিও টেলিভিশন পত্রিকা- পুরনো দিকে তাকালে কেউ বাদ যায়নি।
সংসদ নেতা বলেন, আমার কাজ হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাস জনগণের সামনে তুলে ধরা। ইতিহাস আজ মানুষের সামনে উন্মোচিত। মানুষ এর চর্চা করছে। আজকের তরুণরা ইতিহাসের প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী, এটাই বড় বিচার। যারা সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দিতে চেয়েছিল তারা চলে গেছে ইতিহাসের অন্ধকূপে।
এর আগে এ কে এম রহমতুল্লাহর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহ”/ত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলশ্রুতিতে গত বছরের ১৪ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সে”/নাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হ”/ত্যাকা”ণ্ডকে গণহ”/ত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে একটি প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবটি ওহাইও কংগ্রেসম্যান স্টিভ চ্যাবট এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না এনেছিলেন। পরে, ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাটি পোর্টার এবং নিউ জার্সির টম ম্যালিনোস্কি সহ-স্পন্সর হিসেবে যোগ দেন। প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উত্থাপিত এই প্রস্তাব বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রকেই নয়, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগণিত মানুষের আত্মত্যাগ, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীর মা-বোনদের সম্মানিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা হলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী এবং একাধিক সাধারণ নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে শেখ হাসিনা ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপও নিয়েছেন। তবে তার সরকার মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সমস্যাগুলি পরিচালনা করার জন্যও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।