দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চাইছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধনমুক্ত দলটি সভা-সমাবেশের মতো নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জানাতে চাইছে। শিক্ষা কারিকুলামে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গ্যাস সংকট, পবিত্র ধর্ম ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়সহ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় সামনে এনে গণসংযোগ করছেন।
জানা গেছে, বহু স্তরের রাজনৈতিক ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও নিয়মিত সাংগঠনিক পর্যায়ের সম্মেলন-সভা করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দলের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা ও নতুন আন্দোলনকে সামনে রেখে অনেক জেলা ও মহানগরে কমিটি নবায়ন করা হয়েছে। কোথাও অধিভুক্ত সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদেরকে শক্তিশালী রাখতে এবং সামাজিক কাজের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশেষভাবে মনোযোগী হতে শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি কোনো ঘোষণা না থাকলেও বিগত বছরগুলোতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে একযোগে সব কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপির এই রাজনৈতিক মিত্র। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে দলটি অনেক কৌশলগত আন্দোলন করেছে। বড় ধরনের সহিংসতায় জড়িত নয়। ৫ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে জামায়াত যে কৌশল নিয়েছে তা নিছক রাজনৈতিক পশ্চাদপদতা নয় বলে দলটির নেতাদের দাবি। যা তাদের কর্মপরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে। দলটি মনে করে, এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আর সেটা প্রমাণ করতেই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। এখন তারা আওয়ামী লীগের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একতরফা ভোটের নানা অনিয়ম ও জালিয়াতির কথা তুলে ধরে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি তারা সফল হয়েছে। এ কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানও ওই সময় বক্তব্য দেন। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলের ভেতরে যতই চাপ থাকুক না কেন, জামায়াত আপাতত হার্ডলাইনে যাবে না। দ্রব্যমূল্য, গ্যাসের দাম ও মিটার ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করে আসছে জামায়াত। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সহিংসতা পরিহারের নীতি দৃশ্যত অনড় বলেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তবে পর্যবেক্ষকরা একমত যে জামায়াতের মতো ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনের দেশে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার কোনো অঙ্গীকার নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে দলটি তাদের বর্তমান অবস্থান কতদিন ধরে রাখবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে। তবে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের কারণে নেতা-কর্মীদের সম্পদ ও চাকরি হারানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জামায়াতের দলীয় ফোরামে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি নিতে দলের তৃণমূল নেতাদের তাগিদ রয়েছে। সে লক্ষ্যে দলটি নীরবে সংগঠনকে সুসংগঠিত করে রাজপথে কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত জামায়াতের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি সাবেক এমপি শাহজাহানকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির করা হয়েছে। এ ছাড়া যশোর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জেও নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে সক্রিয় করছেন। একইভাবে দলটির ছাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মঞ্জুরুল ইসলামকে সভাপতি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলামকে সম্পাদক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে শোডাউন করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা নতুন করে রাজধানীর নাগরিকদের জানান। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসে এবং দেশ ও জাতিকে বিদায় করে দেয়। গভীর সংকট।এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করতে সর্বস্তরের জনগণকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।তিনি বলেন, রুকনরা সংগঠনের মূল চালিকাশক্তি।তাই তাদের মাঠে সৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। চলমান আন্দোলনকে গতিশীল করুন এবং সফল করুন।উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতে ইসলামীকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করে।দলের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রেজাউলসহ ২৫ জন। হক চাঁদপুরী ২০০৯ সালে একটি রিট আবেদন করেন। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন। ২ অক্টোবর।