নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা আগের চেয়ে গতি লাভ করেছে, কারণ আর মাত্র সপ্তাহ খানেক বাকি রয়েছে নাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে। এই আলোচিত নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘সেলিনা হায়াৎ আইভী ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। কিন্তু আমি জনগণের প্রার্থী আইভীর পক্ষে তাদের দলের লোকজন কাজ করছে। আমার পক্ষে রয়েছে জনগণ, তারাই আমার পক্ষ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এদিকে তৈমুর ফের আইভীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইসিতে অভিযোগ করেছেন। এবার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, মেয়র প্রার্থী তৈমুরের পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন সাংসদ শামীম ওসমান।
শনিবার বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ডে নির্বাচনি প্রচারের সময় তিনি বলেছেন, গতকাল বন্দরে তৈমুর প্রচারণা চালিয়েছেন, সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির চারজন চেয়ারম্যান তার সঙ্গে ছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় নারায়ণগঞ্জে যে গুঞ্জন ছিল তৈমুর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেট, গতকাল তা প্রমাণিত হয়েছে।
এদিন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নিচে সিনামন রেস্টুরেন্টে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে এক মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাচন সমন্বয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তিই এ নির্বাচনে কোনো অবস্থাতেই অপরিহার্য নয়। যার কথা বলা হচ্ছে তিনি একটা দলের আদর্শ নীতি-শৃঙ্খলা নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ- ইত্যাদি লালন করেই এত ‘বড় নেতা’ হয়েছেন। উনি যদি আজ সেগুলো প্রতিপালন না করেন এবং দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, আমাদের কাছে যেসব খবর আসছে সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। উনি আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন নিশ্চিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আমাদের কাছে বিকল্প থাকবে না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে মতবিনিময় সভায় গণমাধ্যম কর্মীদের অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় প্রার্থী আইভী নৌকা প্রতীকের হয়েও কেন সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী ইকবাল, বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কাউন্সিলর প্রার্থী সাদরিল ও শহরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী পপী রানীকে নিয়ে নৌকার প্রচারণা করেছেন- এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি কেন্দ্রীয় নেতারা।
এছাড়া আইভী বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের প্রার্থী- এ কথার সঙ্গে তারা একমত কিনা, এমন প্রশ্নেরও সরাসরি কোনো উত্তর দেননি নেতারা।
মতবিনিময়কালে আব্দুর রহমান বলেন, একটা অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নারায়ণগঞ্জে হতে পেরেছে কিনা এটাই প্রধানমন্ত্রীর মূল দৃষ্টিভঙ্গি। সুতরাং নারায়ণগঞ্জে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং সবাই যেন ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা অবশ্যই নির্বাচন কমিশন করবে।
মতবিনিময়কালে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আমরা যারা আছি, নৌকাকে জেতাতে কাজ করে যাচ্ছি। ভৌগোলিক কারণে নারায়ণগঞ্জ আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইভী এতদিন সুন্দর, সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই কারণে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন এবং নৌকাকে দেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে এখানে কোনো ব্যক্তি বিষয় নয়। এ নির্বাচনে আমি কী অবদান রাখব, দায়িত্ব পালন করব কিনা- তা আমার ওপরই নির্ভর করে। যদি আমি ব্যর্থ হই সেজন্য দলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, সে যেই হোন না কেন। নৌকার জন্য যদি কাজ না করেন, তাহলে নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘা’তকতা করা হবে। জাতীয় পার্টি আমাদের মহাজোটের সংগঠন। এখানে যিনি আছেন তাকে মনে রাখতে হবে, আমাদের সমর্থন নিয়েই আপনি নির্বাচন করেছিলেন। আশা করি তিনি আমাদের সমর্থন করবেন।
নানক আরও বলেন, এ নির্বাচনে প্রধান হচ্ছে গণসমর্থন। নৌকার পক্ষে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এ জাগরণে নৌকা লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করবে।
উল্লেখ্য, নাসিক নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আইভী ও তৈমুরের প্রচার প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকা। তাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন তাদের কর্মী সমর্থকরা। তারাও তাদের পক্ষ হয়ে নিজেদের মত করে কাজ করে যাচ্ছেন। ভোটারদের আশা এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে এই নির্বাচনে অন্য আলোচিত ব্যক্তি হলেন শামীম ওসমান। তিনি যেহেতু সংসদ সদস্য তাই তিনি নির্বাচনে কাউকে সমর্থন দিতে পারছেন না। তবে অনেকে মনে করছেন শামীম ওসমান অনেকটা ছায়া সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন একজন মেয়র প্রার্থীকে জয়ী করতে।