নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের আলোচিত আ.লীগ এমপি একেএম শামীম ওসমান প্রসঙ্গে সমালোচনা করে এবং ভিণ্নভাবে আখ্যায়িত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণে স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে শামীম ওসমানের একান্ত সচিব। এ ঘটনার পর পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে হাফিজুর রহমান যিনি শামীম ওসমানের পিএস হিসেবে দায়িত্বরত তিনি এই ঘটনায় বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় প্রবর্তিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত আবু সৌদ মাসুদ দৈনিক সোজাসা+টার প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
সোমবার দুপুরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সাইদুজ্জামান জানান, ৮ ডিসেম্বর রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। তবে রোববার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
মামলার বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ৪ ডিসেম্বর সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে নিয়ে স্থানীয় দৈনিক সোজাসাপ্টায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শামীম ওসমানের নামে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অভিযোগে পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক আবু সৌদ মাসুদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা করা হয়েছে। তাকে মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে।
মামলার জবানবন্দিতে বাদী হাফিজুর রহমান নিজেকে সংসদ সদস্যের একান্ত সচিব হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, সাংবাদিক আবু সৌদ মাসুদ ইচ্ছাকৃতভাবে তার পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ইবলিশের খপ্পরে সোজাসাপটা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন। সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছবি বিকৃ”ত করে তাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য তার বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য প্রকাশ করেছে। .
ওই শিরোনামে প্রতিবেদনটি পত্রিকার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়। এ প্রতিবেদনের কারণে শামীম ওসমানের পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে মানহানি হয়েছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর সংবাদ প্রকাশের কারণে জেলায় অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
এমতাবস্থায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় মামলা করেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বিষয়ে জানতে বাদী হাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি মামলার কপিতে যা বলেছি তা আপনাদের নিকট উল্লেখ করেছি। এখন কথা বলা সম্ভব নয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিলের চেষ্টা করছেন। প্রতিবেদনের সঙ্গে শামীম ওসমানের একটি কার্টুনও ছাপা হয়।
মামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ বলেন, “হাম”লার মা”মলা করে সংবাদ লেখা বন্ধ করা যাবে না। আমি কোনো ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করিনি। আমি সাংবাদিকতা করি, মামলা হতেই পারে। কিন্তু অন্যায়ের সঙ্গে কোনো আপস করব না। আমি কখনো কাউকে ভয় পাইনি এবং কখনোই পাব না। আমি একজন স্বহারা মানুষ। আমার হারানোর কিছু নেই। যেহেতু মামলা হয়েছে তাই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাব।
পত্রিকা ছাপা বন্ধ
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন। সম্পাদক ও প্রকাশক আবু সৌদ মাসুদ 8 ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ভুল উল্লেখ করে প্রেরিত প্রজ্ঞাপন বাতিলের একটি চিঠি পান। সংবাদপত্রটি ৯ ডিসেম্বর থেকে ছাপা বন্ধ রয়েছে।
আবু সাউদ মাসুদ বলেন, এ বিষয়ে আমাকে নিজের পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি ১১ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে জানতে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
নাজমুল আলম যিনি নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি ঘটনার বিষয়ে বলেন, অভিযুক্ত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে এজাহার প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য একজন উপ-পরিদর্শককে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।