বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে চলচ্চিত্র শিল্পে ব্যাপক ধস নামে। শুধু তাই নয়, বিনোদন মাধ্যম বর্তমান সময়ে মানুষের হাতে থাকা হ্যান্ডসেটগুলো হয়ে উঠেছে যার কারণে বাংলাদেশি সিনেমা হলের দিকে আগ্রহ হারাচ্ছে দর্শকেরা। দুর্বস্থায় থাকা চলচ্চিত্র শিল্প চাঙ্গা করতে সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে দিয়েছে নির্মাতা, প্রযোজক, পরিচালক এবং চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। এবার এই অনুদান পকেটে ঢোকানোর অভিযোগ তুলেছেন চলচ্চিত্র শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকে।
প্রতি বছর চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য মোটা অঙ্কের সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। সরকারি অনুদানের সিংহভাগই বছরের পর বছর ঘরানার শিল্পী-নির্মাতা-প্রযোজকদের পকেটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্টো ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের অনুকূলে এই অনুদানের পরিমাণ ক্রমেই কমছে। বিশেষ করে প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদানের বাজেট এখন শূন্যের কোঠায়!
তাই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা। তারা স্পষ্ট ভাষায় বলছেন, শাকিব খান, অপু বিশ্বাসকে কেন সরকারি অনুদান দিতে হবে!
সোমবার (৪ জুলাই) শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতির প্রতিবাদে চলচ্চিত্র কর্মীদের সমাবেশে অনুদান নীতিমালা কমিটির নানা অসঙ্গতির কথা উঠে আসে। ৩৪টি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রযোজক নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ বলেন, “বানিজ্যিক সিনেমা নির্মাণের জন্য নানান ফান্ডিংয়ের জায়গা আছে। কিন্তু জনগণের টাকায় বাণিজ্যিক সিনেমা বানানো ঠিক হবে না। আমরা বাণিজ্যিক সিনেমার বিপক্ষে নই। কিন্তু সরকারি সিনেমা হবে শৈল্পিক সিনেমা। শাকিব খান, অপু বিশ্বাস নিজেদের টাকায় কী ছবি বানাতে পারেন না? কেন তাদের অনুদান দিতে হবে?’
চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ সমাবেশে বলেন, সরকারি অনুদানের লক্ষ্য হতে হবে শৈল্পিক চলচ্চিত্র নির্মাণ, বাণিজ্যিক নয়। প্রথমটি মুক্তিযু”দ্ধ, প্রথম হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, দ্বিতীয় হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আমাদের সামগ্রিক অবস্থা প্রাধান্য দেবে যে চলচ্চিত্র সেগুলোকেই সরকার অনুদান দেবে। এটা হচ্ছে মূল কথা।’
আরেক প্রযোজক জাহিদুর রহিম অঞ্জন বলেন, ‘স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্রের জন্য একটি কমিটি করা হোক। তারা যাচাই করে মঞ্জুর করবে। প্রয়োজনে দশটি প্রামাণ্য ছবিতে জন্য অনুদান দিতে হবে।
ঢাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি সিয়ান শাহরিয়ার আলমগীর, বাংলা প্রামাণ্য ছবিতে বোর্ডের সদস্য পর্ষদের সদস্য ভ্রাত্য আমিন, চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়রা বিলকিস, ফরিদুর রহমান, আবু সাইদসহ অনেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
সমাবেশে প্রতিবাদী গান গেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সদস্যরা। সমাবেশে দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের নিশ্চয়তাসহ ১০টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়।
তবে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন যে, চলচ্চিত্র শিল্প দিন দিন খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। তাই সরকার যতই চলচ্চিত্র শিল্পকে চাঙ্গা করতে অনুদান দিয়ে থাকেন না কেন চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচাতে চলচ্চিত্রের মানের দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভালো মানের কোনো চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারছে না। যার কারণে আস্তে আস্তে চলচ্চিত্র শিল্প খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে, তাই এদিকে সরকারের সুনজর আশা করছেন তারা।