লুঙ্গি পরা গ্রাহককেও স্যার বলতে হবে এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকেও এমনই নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মামলার শুনানিকালে বিচারপতি আবু তাহের মো. বিচারপতি সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল এ মন্তব্য করেন। গ্রাহক যে পোশাকেই থাকুক না কেন তাকে স্যার বলে সম্মন্ধন করতে হবে, কারন প্রত্যেকটি গ্রাহকই আপনাদের কাছে মুল্যবান তাই তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া আপনদের জন্য বাঞ্চনিয় এমনটাই বলেন বিজ্ঞ আদালত।
এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তার করে হাইকোর্টে হাজির করা হয়েছে। এ সময় তারা আদালতের আদেশ না মানায় হাইকোর্টে ক্ষমা চান। তবে আদালত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সময় তাদের সঙ্গে হাইকোর্টে উপস্থিত ছিলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল। তারিক আফজাল এ সময় বলেন, দেশের একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির ছেলে (এটিএম আফজাল হোসেন)ও ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি আদালতকে বলেন, আদালতের আদেশ না মানার জন্য তিনি (এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা) নিজেই লজ্জিত। তিনি তাদের ভুলের জন্য লজ্জিত হয়ে আদালতে ক্ষমা চেয়েছেন। দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আদালত।
দুই কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ধনী-গরিব সবাই ব্যাংকের গ্রাহক। তারা যে টাকা সঞ্চয় করে তা দিয়ে আপনার বেতন-ভাতা এবং সংসার চলে। তাই লুঙ্গি পরে আসা ক্রেতাকেও মূল্যায়ন করতে হয়। তারা লুঙ্গি পরে আসলেও কিন্তু তাদের স্যার বলে সম্বোধন করতে হয়। কারণ গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানের (ব্যাংক) প্রাণ। তাই লুঙ্গি পরা ব্যক্তিকেও স্যার বলা উচিত। আজ আদালতে রিট আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. ইয়ারুল ইসলাম। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট গোলাম রাব্বানী। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বিএম ইলিয়াস হোসেন কচি, ব্যারিস্টার এবিএম রবিউল হোসেন সুমন, অ্যাডভোকেট খায়রুল আলম চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট আবু তালেব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়াইস হারুনী। শুনানির শুরুতে হাইকোর্টের আদেশ সত্ত্বেও সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী শফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া এবি ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
এ সময় আদালত এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজালকে কোনো গ্রাহক ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে চাইলে সব শাখায় এ ধরনের সার্কুলার জারি করতে বলেন। পরে আদালত দুই কর্মকর্তাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে এবং তাদের অবমাননার অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। এর আগে মঙ্গলবার (৩১ মে) এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গুলশান ও সাতক্ষীরা সদর থানাকে নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। ৫ জুন তাদের আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। এরপর এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরদিন আপিল করেন। গত ১ জুন এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ। গত ১ জুন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম.এস. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার বিচারক নো অর্ডার দিয়েছেন। একই দিন আদালতে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোঃ আহসানুল করিম।
সাতক্ষীরা সাফি এন্টারপ্রাইজের মালিক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়াইস আল হারুনী মো. সফিউর রহমান এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। তিনি ঋণের বিপরীতে একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট চান। কিন্তু এবি ব্যাংক থেকে তাকে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়নি। তারা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে রাজি নন। পরে হাইকোর্টে রিট করেন সফিউর রহমান। তিনি বলেন, রিটের শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট আমাকে এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আদালতের আদেশের বিষয়টি আমি প্রধান কার্যালয়ের এভিপি আমিনুল ইসলাম ও সাতক্ষীরা শাখার ব্যবস্থাপককে জানিয়েছি। ব্যবসায়ী সফিউর রহমানকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিতে বলেছি। এভিপি আমিনুল ইসলামকেও আদালতে হাজির হতে বলেছি। আবেদনকারী এবি ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখায় বক্তব্য আনতে যান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি। আদালতের আদেশের পরও ব্যাংক স্টেটমেন্ট না দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরে এবি ব্যাংকের কর্মকর্তারা আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন।
উল্লেখ্য, বিজ্ঞ আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও একজন গ্রাহককে তার ব্যাংকের স্টেটমেন্ট না দেওয়ার অভিযোগে উক্ত ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের আদেশ দেন হাইকোর্ট। তবে তার আদালত প্রঙ্গনের তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন। গ্রাহক ধনী কিংমা গরীব যেমনই হোকনা কেন তাদের সবাইকে সমান নজরে দেখার পরামর্শ এবং নির্দেশ দেন। পাশাপাশি তাদের নিজেরদেরসহ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ সবাইকে এই সস্কৃতি রপ্তের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।