বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণ বন্ধ করার জন্য পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ জানিয়েছিল, কিন্তু তা সত্বেও এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমান সময়ে প্রায় শেষের পথে। এই কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘হিন্দুস্তান টাইমস’। তাদের এই প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টিকে ভিত্তিহীন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
রোববার পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ একরাম উল্লাহ দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।
তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ এখনো শেষ হয়নি। উদ্বোধন কবে হবে তা ঠিক হয়নি।
‘পিএম মোদি, শেখ হাসিনা টু ইনোগরেট মৈত্রী পাওয়ার প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তারা যৌথভাবে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট উদ্বেধন করতে পারেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর দুই থেকে তিন দিনের সফরে ভারতে যেতে পারেন। এই সফর উভয় দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দুস্তান টাইমসের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ একরাম উল্লাহ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “আমরা এটা জানি না। তারা কোথা থেকে এটা পেয়েছে আমি জানি না। কাজ এখনো শেষ হয়নি।
‘উদ্বোধন করব কখন! এখনও এটির পরীক্ষা হবে, শাটডাউন হবে। আমরা উদ্বোধনের বিষয়ে কথাই হয়নি এখনও, আমি জানি না তারা কী ভাবছে। আগে চালু করতে হবে, তারপর উদ্বোধন।
বিআইএফসিএলের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) আনোয়ারুল আজিম এ প্রসঙ্গে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এখনও কয়লা আসেনি। কয়লা আসার পথে। কয়লা আসার পর ট্রায়াল রান হবে। অনেক কিছু করতে হবে? তারপর না উদ্বোধনের চিন্তা।’
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের (রামপাল) আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি ইউনিটে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা। ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (BHEL) নামে একটি ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি কেন্দ্রের মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য দায়িত্বে রয়েছে।
কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয় ২০১০ সালের দিকে। সবকিছু গোছগাছ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১২ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কর্মকাণ্ড শুরু হয়। রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ যাতে বন্ধ করা হয়, সেজন্য পরিবেশবাদীরা সরব হন। কিন্তু সব কিছু উপেক্ষা করে সরকার নির্মাণ কার্য সম্পাদনের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।