বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে এখনো রয়েছে বেশ ধোঁয়াশা। আর এই ধোঁয়াশা নিয়ে প্রায়শই উঠে থাকে নতুন নতুন অনেক কথা। এ দিকে নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে নির্বাচন অর্থহীন। এটা কোনো নির্বাচন নয়।
তিনি আরো বলেন, আর জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে তাদের কাজের মাধ্যমে সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ। বুধবার ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তথ্য’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডেইলি স্টার ভবনের এএস মাহমুদ আলী মিলনায়তনে সুজন ও আকি প্রকাশনী যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) দুটি বই প্রকাশ করেছে।
আবু হেনা আরো বলেন, সংবিধানে বলা আছে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সব জনবলের ব্যবস্থা করবেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য। এ ছাড়া বিভিন্ন আইনের মাধ্যমে ইসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। আইন অস্পষ্ট থাকলে নির্বাচনের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। ইসির পুরো সুবিধা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন করা। নির্বাচন কমিশনে যারাই আছেন তাদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্ব রয়েছে। ইসি তাদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হলে অনেক সমস্যা এড়ানো যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তাতে অংশগ্রহণের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সব দলের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবু হেনা বলেন, ইচ্ছা মূল বিষয় নয়। সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো উচিত। নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হতে হবে। সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। তারা ইসির কাজে নিরপেক্ষ হলে সবাই নির্বাচনে আসবে। তিনি বলেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তাদের। যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলারও পরামর্শ দেন সাবেক এই সিইসি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) কিছু ধূসর এলাকা রয়েছে। সেটা নিয়ে কাজ করা দরকার। হলফনামায় তথ্য যাচাইয়ের সক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে বলে মনে হয় না। তাদের সময়ে তারা প্রার্থীদের হলফনামা রাজস্ব বোর্ডে পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাননি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরাট করা এবং এ বিষয়ে তৎকালীন সিইসি কে এম নুরুল হুদার বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সকালে বিবিসি দেখিয়েছে যে ভোট হয়েছে। রাত যেখানে এমনটা হয়েছে সেখানে ভোট বন্ধ করতে পারত ইসি। কিন্তু তা করা হয়নি। নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণার আগে প্রজ্ঞাপন বন্ধ করে তদন্ত করতে পারে। আবু হেনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনে তা করেছে।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন শুধু অংশগ্রহণমূলক নয়, প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। নির্বাচন মানে নির্বাচন করার সুযোগ। তাই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প থাকতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের তথ্য পাওয়া ভোটারদের অধিকার। কিন্তু প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে বানোয়াট তথ্য দেন। কারণ এসব তথ্য নির্বাচন কমিশন যাচাই করে না।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, হলফনামায় দেওয়া প্রার্থীদের তথ্য যাচাই করা হয়নি। এখান থেকে বের হওয়া দরকার। প্রার্থীদের তথ্য কত শতাংশ ভোটারদের কাছে পৌঁছেছে তাও দেখতে হবে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।
প্রসঙ্গত, সামনে এগিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। আর এই নির্বাচন নিয়ে এখনই শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। বিশেষ করে সিইসি নির্বাচন নিয়ে এখনই নিতে শুরু করেছে নানা ধরনের প্রস্তুতি। আর সেই সাথে রাজনৈতিক দলগুলোও নির্বাচন নিয়ে হয়ে উঠেছে বেশ সোচ্চার।