বাংলাদেশে যে কয়টি রাজনৈতিক দল রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এবার এই দলটি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হচ্ছে। এই লক্ষ্যে আগামী ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার জন্য এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য এধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এদিকে অনেকদিন ধরে কোনো বড় সম্মেলন করেনি দলটি তাই নেতাকর্মীদের একতাবদ্ধ করার জন্যও এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। বৈঠকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল ও ঢাকা মহানগর কমিটির সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের নবনিযুক্ত যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী।
তিনি বলেন, বৈঠকে কারাবন্দী আলেম ও হেফাজত কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এ দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং ২০১৩ সাল থেকে হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এছাড়া সারাদেশে জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে হেফাজতকে সুসংগঠিত করতে মহাসচিবের নেতৃত্বে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজকের বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার ছেলে জুনায়েদ বিন ইয়াহিয়াকে হেফাজেতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হয়েছে। একই কমিটিতে প্রয়াত মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে রাশেদ বিন নূরকে দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে।
বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং হেফাজত ইসলামের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করতে সোমবার দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় হেফাজত। তবে অজ্ঞাত কারণে কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়তুল্লাহ আজহারী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের কিছু সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যম কর্মীদের জানানো হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মুফতি জসিম উদ্দিন, মাওলানা ফুরকানুল্লাহ খলিল, মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা জহুরুল ইসলাম, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা মীর ইদরীস, মুফতি মোহাম্মদ আলী, মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, কিফায়েতুল্লাহ আজহারী, সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার ও মাওলানা রাশেদ বিন নূর।
সভায় কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটি সম্প্রসারণ ও পুনর্বিন্যাস করা হয়। কেন্দ্রীয় কমিটির তাবলীগ সম্পাদক মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী ও কেন্দ্রীয় দাওয়া সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম সোবহানীকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে।
এছাড়াও মুফতি কিফাইতুল্লাহ আজহারীকে প্রচার সম্পাদক এবং মাওলানা রশিদ বিন নূরকে দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে। অপরদিকে মাওলানা তাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও মাওলানা লোকমান হাকিমকে সদস্য সচিব করে ১৭ সদস্যের চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বৈঠকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের কোনো কাজে হেফাজত উপাধি ব্যবহার না করার জন্য সকল কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন হেফাজত আমীর।
এছাড়া সারাদেশে জেলা কমিটি গঠনের জন্য সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এতে আরও রয়েছেন মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী এবং মুফতি কিফাইতুল্লাহ আজহারী।
প্রসঙ্গত, দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ শুরু করেছে। দলটি আগামীতে বৃহৎ আন্দোলনের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের সম্মেলন শুরু করেছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এদিকে বিএনপির সাথে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ মাঠে নামবে, এমনটাই জানা গেছে। তবে এককভাবে জামায়াত মাঠে নেমে নিজেদের অবস্থান যাচাই করবে এমনটাই মনে করছেন অনেক রাজনীতিবিদেরা।