আ.লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে সুসংগঠিত করার জন্য সংগঠনটিকে শক্তিশালীকরণ এবং কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ব্যস্ত রয়েছে দলীয় নেতারা। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় খোঁজ খবর রাখেন, বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। কারন শেখ হাসিনা সবসময় দলকে সংগঠিত রাখার দিকে মনোনিবেশ দিয়ে থাকেন। এদিকে নেতৃত্বে আসতে চলেছে জাতীয় চার নেতার পরিবার এমনটিই জানা গেছে।
নভেম্বরের মধ্যে তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব আনা ও বিভেদ কাটিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোর কাজ শেষ করে তারা নজর দিতে চান কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের দিকে। তবে তার আগেই কেন্দ্রের নেতৃত্বে কারা যোগ দিচ্ছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা। জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ সবচেয়ে বেশি আলোচিত। কেন্দ্রীয় কোন পদে তিনি আসছেন সেটা নিয়ে চলছে নানা কথা। সেই সঙ্গে জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা পরবর্তী কমিটিতে স্থান পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শুরুতেই জাতীয় চার নেতার পরিবারের মধ্যে একজনকে রাখা হয়। শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগে প্রাণ হারান তিনি। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে জাতীয় চার নেতার সদস্য পদ শূন্য হয়। পরে শহীদ এইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে নিয়োগ দিয়ে একজন হাজির হন। তিন পরিবার অনুপস্থিত। তাদের কেউই বর্তমান কমিটিতে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। তবে আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের পরিবারের অন্তত একজন করে জায়গা পেতে পারেন বলে জোর আলোচনা চলছে।
শহীদ এইচএম কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন ভবিষ্যতেও সভাপতি-লীর সদস্য পদে থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। এমনকি তাকে দলের অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। বাকি তিনটি পরিবারের মধ্যে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে ড. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে বলে আলোচনা চলছে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রয়ানের পর এই পরিবারের কাউকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখা হয়নি। তবে সৈয়দ আশরাফ আসনে তার বোন জাকিয়া নূর লিপি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। আগামী কাউন্সিলে লিপিকে কেন্দ্রীয় সদস্য করতে দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ নাসিমের প্রয়ানে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছে শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পরিবার। তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় পরে মোহাম্মদ নাসিমের আসনে সংসদ সদস্য হন।
এ ছাড়া একই পরিবারের সদস্য ও শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর বড় ছেলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ সেলিমের ছেলে ডা. শেহেরীন সেলিম রিপন রাজনীতিতে সক্রিয়। মোহাম্মদ নাসিমের শূন্য আসনেও তিনি মনোনয়ন চেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ব্রিটেনের রানীর দেওয়া এমবি অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর আওয়ামী রাজনীতিতে তাকে নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। ফলে এই পরিবার থেকে ড. শেরীন সেলিম রিপন বা তানভীর শাকিল জয়কে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনা হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
এই তিন পরিবার ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিদ আহমদ সোহেল তাজদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসছেন। আলোচনা ভাই”রাল হয়েছে। ‘দলের প্রয়োজনে ডাকে সাড়া দেব’- সম্প্রতি রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা ও আসন্ন কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন তা আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ভালো জানেন। এই দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত খবর রাখেন তিনি। যতদূর জানি, আগামী কাউন্সিলে জাতীয় চার নেতা ও শহীদ নেতার পরিবারকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কাউন্সিলে যাদের মতামতের অধিকার আছে, তারা অবশ্যই জাতীয় চার নেতার পরিবারের অবদানের কথা মাথায় রাখবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এবারের নির্বাচন নানা দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে যোগ্য নেতা, আত্মত্যাগী ও দলের প্রতি অনুগত নেতাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনাটাই স্বাভাবিক।
এদিকে জাফরুল্লাহ যিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হিসেবে রয়েছেন, তিনি বলেন, এটা মনে হচ্ছে শহীদ তাজউদ্দীন এর পরিবারের যে কেউ দলের কোনো পদে আসতে পারেন। তাছাড়া জাতীয় চার নেতার পরিবারের আরো বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন, যারা ইতিমধ্যে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর যেটা বলা হচ্ছে সেটা শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর কথা।
এবার রাজনীতিতে বড় পদ নিয়ে ফিরছেন জাতীয় চার নেতার পরিবার, জানা গেল কে পেতে পারেন কোন পদ