Saturday , December 28 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এবার যুক্তরাষ্ট্র হতে বাণিজ্য নিয়ে বড় ধরনের দুঃসংবাদ মিলল

এবার যুক্তরাষ্ট্র হতে বাণিজ্য নিয়ে বড় ধরনের দুঃসংবাদ মিলল

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী বৈদেশিক বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহেও শীর্ষ থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে। বিদেশি অনুদানের প্রবণতাও কমেছে। এছাড়া বাংলাদেশে আমেরিকান উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগও কমেছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার প্রবণতাও কমেছে। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমছে, স্বল্পমেয়াদি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে নানাভাবে চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে মানবাধিকার ও নির্বাচনী ইস্যুতে ভিসা নীতি আরোপ করেছে। এছাড়া শ্রমিকদের অধিকার হরণ করা হলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হু/মকি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য কমে যাওয়ার পেছনে ওইসব কারণও জড়িত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার আহরণের প্রধান উৎস। দেশ থেকে বেশিরভাগ পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। এটি একসময় রেমিট্যান্সের শীর্ষ প্রাপক ছিল। এছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে দেশের অবস্থান শীর্ষ সারিতে। বৈদেশিক মুদ্রাও আসে অনুদান থেকে। বৈদেশিক ঋণের অন্যতম উৎস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এসব খাতে দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশে ডলারের প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তখন ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর ভ/য়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ডক্টর মাইনুল ইসলাম বলেছেন, একতরফা নির্বাচন বিদেশীরা মেনে নেবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে শুধু অর্থনৈতিক সমস্যাই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। বড় দেশ থেকে এ ধরনের বাধা এলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। যা মোট রেমিটেন্সের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মোট রেমিটেন্সের আসার মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিটেন্স আহরণে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। আলোচনার সময় শীর্ষ অবস্থান থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমে আসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার। তখন তা ছিল মোট রেমিটেন্সের ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। ওই সময়ে ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বরে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে ৮৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, এপ্রিল-জুন মাসে ৭২ কোটি ৮ লাখ ডলার এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। উপলব্ধ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতিটি প্রান্তিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রেমিটেন্সের ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২০ কোটি ডলার এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮৪ কোটি ডলার এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪০ কোটি ডলার এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৬ কোটি টাকা, যা মোট রেমিটেন্সের ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৪৪ কোটি ডলার এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৫২ কোটি ডলার এসেছে, যা মোট রেমিটেন্সের ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৬ বছরে দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এখন সেখান থেকে কমছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে দেশে রপ্তানি হয়েছে ২৮৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে জুনে ৮৭০ কোটি ডলার, জুলাই মাসে ৮১০ কোটি ডলার, আগস্টে ৮০০ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৬৮০ কোটি ডলার এবং অক্টোবরে ৫৮০ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে। তথ্যে দেখা যায়, প্রতি মাসেই আয় কমছে। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর রপ্তানি আয় ছিল ৩০৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে দেশ থেকে রপ্তানি আয় প্রায় ৭ শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরে দেশে রপ্তানি হয়েছিল ৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের সাড়ে ১৭ শতাংশ। একক বৃহত্তম রপ্তানি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এখন রপ্তানি আয় কমছে। ফলে সামগ্রিক রপ্তানি আয় কমছে।

About Babu

Check Also

নথিপত্র গায়েব হচ্ছে সন্দেহে তুলকালাম কাণ্ড, দুইটি ট্রাক আটক

বরিশালের চরবাড়িয়া ইউনিয়নে পুরোনো নথিপত্র গায়েব হওয়ার সন্দেহে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সচিবালয়ে নথিপত্র পুড়িয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *