একের পর বিবাদ-বিভক্তি, কেউ চায় চেয়ার দখলে রাখতে আর কেউ চায় চেয়ার দখলে আনতে। দলীয় কমিটি থাকলেও অনেকেই চেইন অব কমান্ড মানেন না। যা নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধ চলছে। সবাই নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে ব্যস্ত। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি’ নিয়ে কথা থাকলেও আসলে একদল আরেক গোষ্ঠীকে কীভাবে বিপর্যস্ত করা যায় তা নিয়েই ব্যস্ত।
বর্তমান ‘প্রেসিডেন্ট’ হয়েও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির ঘোষণা দিয়ে আলাদা ক্ষমতার ঘোষণা দিয়েছে একটি মহল। এমন নাটকীয়তায় ভরপুর যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ। ১৬ অক্টোবর একটি মতবিনিময় সভা আগুনে ইন্ধন যোগ করে। নিউইয়র্কের একটি রেস্তোরাঁয় দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত সভায় বড় ধরনের মেরুকরণের সৃষ্টি হয়। যা ছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সাংগঠনিক সভা।
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির অনেক সিনিয়র নেতা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন। আলোচনা সভায় নির্বাচন পর্যন্ত দলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (নেত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে) এবং ১০১ সদস্যের একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও তিনজন উপ-সভাপতি করার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ৮ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ওই ৮ নেতাকে নোটিশ দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হাসিব মামুন ও মুহিউদ্দিন দেওয়ান, জনসংযোগ সম্পাদক কাজী কায়েস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, কার্যনির্বাহী সদস্য হিন্দল কাদির বাপ্পা ও আতাউল গণি আসাদ শোভনকে গ্রহণ করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, গত ১০ অক্টোবর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ব্যানার ব্যবহার করে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। যা সংগঠনের নীতি ও গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। দলীয় গঠনতন্ত্রকে অসম্মান করে রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়াই এম ফজলুর রহমানকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই সংবিধানের ৪৭/ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। অন্যদিকে সভাপতি বিরোধী গ্রুপ বলছে গত প্রায় ৩/৪ বৎসর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে বাদ দিয়ে দলের সহ-সভাপতিকে উনার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এবারের সভাটি ছিলো অনেকটা ব্যতিক্রম, কারণ এবার সংবর্ধনার দায়িত্বই পায়নি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। সে দায়িত্ব ছিলো নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ওপর।
এ বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাসিব মামুন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বহির্বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী ও কার্যকর সংগঠন। যার ইতিহাস বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি কার্যকর ও শক্তিশালী সংগঠন আওয়ামী লীগ আজ বিপর্যস্ত। বর্ণবাদী সুবিধাবাদীদের উত্থান অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আজ বেশি প্রকট। গত কয়েক বছর ধরে এই ধারা চলছে। সভাপতির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, দলে শৃঙ্খলা নেই, নেতাদের নীতি-নৈতিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা আজ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও পৃথক কমিটি অবৈধ। তিনি বলেন, দল বড় তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কিন্তু কোনো প্রতিহিংসা থাকা উচিত নয়। এ সংগঠনের বিরুদ্ধে তাদের কর্মকাণ্ড মরে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এবং দেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের সংগঠনে কোন্দলের কারণে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, কোন্দলের কারণে সংগঠনের ঐক্য ও সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে।