তথ্য প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিছু অশালীন এবং অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করেন। এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। শুধু এই বিষয়টি নয়, ড.। মুরাদ হাসানের একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে এসেছে যেটার এক প্রান্তে ছিলেন মুরাদ হাসান এবং অন্য প্রান্তে ছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি। সেখানে অশালীন কথা শোনা গিয়েছে তার কথায়। মুরাদ বেশ কিছুদিন ধরে তার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্যা আলোচনায় রয়েছেন। তবে খালেদা জিয়ার নাতনীকে নিয়ে মন্তব্য করার পর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো শুরু হয়েছে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসোমবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ প্রশ্ন করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জঘন্য, নিকৃষ্ট কথাবার্তা বলছেন। কাকে নিয়ে করছে? একজন ভুঁইফোড় ডাক্তার ছিলো শুনেছি, সম্ভবত জামালপুরের সরিষাবাড়ীর। এটাও শুনেছি সে নাকি একসময় ছাত্রদল করতো। দুঃখের কথা, দুর্ভাগ্যের কথা। আগে সে ছাত্রদল করতো। সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রচার সম্পাদক ছিলো। পরবর্তীকালে সে ছাত্র লীগে জয়েন করেছে। ধিক্কার দেই আমি তাকে। সেইম।’
‘কিন্তু আরো মারা’ত্মক হচ্ছে ওই বক্তব্যের (তথ্য প্রতিমন্ত্রীর) শেষের যে বক্তব্যটুকু সেটা অত্যন্ত মারা’ত্মক। বলেছে, আমি যা কিছু করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছি এবং তা তিনি সব কিছু জানেন। আামি আজকে এই সভা থেকে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করতে চাই প্রধানমন্ত্রীকে-এই কথা সত্য কি মিথ্যা আপনাকে জানাতে হবে। কারণ আপনি প্রধানমন্ত্রী- এদেশের মানুষের নিরাপত্তা, তার নিজের মর্যাদাকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে এই ভয়াবহ উক্তি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একজন মন্ত্রী করতে পারে তাহলে আপনার সরকারের অবস্থান কি আমরা জানতে চাই। এর উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে এই কথা বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই যে, আপনি কী এমন একটি সরকার নিয়ে এখানে এসেছেন যে সরকার আমাদের দেশের সমস্ত কৃষ্টি, আমাদের দেশের যে সৌজন্যবোধ, আমাদের যে ঐতিহ্যগুলো আছে তাকে বিনষ্ট করে দেবে? রাজনীতিকে তো ধ্বং’স করেছেনই।এখন ন্যুনতম মূল্যবোধগুলো আছে, আমাদের মা-বোনের প্রতি আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধা সেটাও কী আপনি ধ্বং’স করে দেবেন? আমরা তীব্রভাবে শুধু প্রতিবাদ নয়, আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি সেই সমস্ত বক্তব্যের জন্যে।’
তিনি আরো বলেন, ‘একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যু’/দ্ধ করেছিলাম, নব্বইয়ের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যত্থান ঘটিয়েছিলো আমাদের নেতারা এই কারণে যে, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি সভ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মান করবার জন্য। আজকে এই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, এই সরকারের নেতৃত্বে সেই দেশটি আজকে একটি অসভ্য, অশালীন, অমর্যাদাকর দেশের পরিণত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া প্রতিমন্ত্রীর “বিকৃত, অশালীন ও নারীবিরোধী” মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফখরুল। তিনি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির এ ধরনের জঘন্য ও অশোভন আচরণের অবিলম্বে দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমাধানের দাবি জানান। বিএনপি নেতা বলেন, জাতীয় পতাকা বহনকারী একজন “পাগল” ব্যক্তির কাছ থেকে অবমাননাকর মন্তব্য করায় সমগ্র জাতি হতবাক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন জীবন-মৃ’/ত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন, তখন জিয়া পরিবারের একজন নারী সদস্যসহ সদস্যদের বিরুদ্ধে এমন অশালীন ও জঘন্য অপপ্রচার ইতিমধ্যেই দেশের সব মহলের বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে। এটার জন্য সরকার কী পদক্ষেপে যাবে সেটা দেশের মানুষকে দেখাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।