সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ট্রান্সজেন্ডার গল্প ‘শরীফ থেকে শরীফা’ নিয়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ফেলার পর থেকেই আলোচনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এরপর তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিষয়টি বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আসিফ মাহতাবের দাবি, বইটিতে বইয়ে ট্রান্সজেন্ডার ও তৃতীয় লি”ঙ্গ সম্পর্কে ভুল তথ্য রয়েছে। ফলে এই তথ্যের বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্যে তিনি এখনও অনড়।
তিনি বলেন, প্রেক্ষাপটটা ছিল ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু, যেটাকে হিজড়ার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। আমি অনেক আগে থেকেই হিজড়াদের অধিকার নিয়ে লিখেছি, তাদের পক্ষে কথা বলেছি। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার যখন হিজড়াদের অধিকার নিয়ে যায়, আর তার থেকেও ভয়ঙ্কর হচ্ছে, বাচ্চাদের ট্রান্সজেন্ডার আদর্শ পড়িয়ে মগজ ধোলাই করা হচ্ছে।
মানুষকে সচেতন করতেই মাহতাব এমন কাজ করেছেন বলে দাবি করেন। বলেন, ওই কাজ করেছি যাতে মানুষ সচেতন হয়, তারা বিষয়টা সম্পর্কে জানে-বুঝে।
চাকরি হারানোকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাহতাব বলেন, আর কোনো কারণ থাকতে পারে না। কারণ, আমার ক্লাস দেয়া আছে, কোন দিন কোন ক্লাস নেবো সব ঠিক থাকার পর হঠাৎ আমাকে ক্লাসে আসা লাগবে না- এটা বৈষম্যমূলক আচরণ ছাড়া আর কিছুই না।
অন্যদিকে সোমবার (২২ জানুয়ারি) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে তাকে বরখাস্তের বিষয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, আসিফ মাহতাব উৎস ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে তার সাথে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কোনো চুক্তি নেই। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার কর্মী এবং তাদের চুক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ক্যাম্পাসে সবার মাঝে সহযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি তার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করে।
গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত ‘বর্তমান পাঠ্যক্রমের নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনারে আসিফ মাহতাব সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেন।
জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক নাছির উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চরমোনাই আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
বইয়ে হিজড়াদের গল্প ঢুকিয়ে ছাত্রদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে অভিযোগ তোলেন মাহতাব। এ সময় তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের বাজার থেকে ৮০ টাকায় বইটি কিনতে বলেন। পরে বইয়ের ট্রান্সজেন্ডারের গল্প সম্বলিত দুটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে দোকানে ফেরত দেওয়ার কথা বলেন।
এ ঘটনার পর রোববার (২১ জানুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মাহতাব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘আজ আমি ব্র্যাকে নিয়মিত ক্লাস করেছি। আমি এইমাত্র একটি কল পেয়েছি যে আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে পারব না। আমি জানি না কেন তারা হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিল। তারা আমাকে কোনো কারণ জানায়নি।