বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘ ভিন্নমত পোষণকারীদের ভয় দেখানো এবং উৎপীড়নের বিষয়ে জিরো-টলারেন্স নীতি মেনে চলে। এই তালিকায় বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ৩৯টি দেশে এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি) ‘কো-অপারেশন উইথ ইউনাইটেড নেশনস, ইট’স রিপ্রেজেন্টেটিভস অ্যান্ড মেকানিজমস ইন দ্য ফিল্ড অব হিউম্যান রাইটস’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচআরসির চলমান অধিবেশনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
যে ৪০টি দেশের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অ্যান্ডোরা, বাহরাইন, বেলারুশ, বুরুন্ডি, ক্যামেরুন, চীন, কলম্বিয়া, কিউবা, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআর) কঙ্গো, জিবুতি, মিশর, ফ্রান্স। , গুয়াতেমালা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল, সৌদি আরব, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মেক্সিকো, মায়ানমার, নিকারাগুয়া, ফিলিপাইন, কাতার, রাশিয়া, দক্ষিণ সুদান, তানজানিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম, ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন এবং ফিলিস্তিন।
১ মে ২০২২ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে, UNHRC রিপোর্টে বলা হয়েছে যে এই ৪০টি দেশে অন্তত ২২০ জন ব্যক্তি এবং ২৫টি প্রতিষ্ঠান সরকার ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দ্বারা চলমান হয়রানি, ভয়ভীতি এবং প্রতিশোধের শিকার। রাষ্ট্র ও ক্ষমতাবানদের উৎপীড়নের শিকার এসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সবাই মানবাধিকার তৎপরতা ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত।
সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব এই প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, জাতিসংঘ সব ধরনের ভয়ভীতি ও প্রতিশোধমূলক কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জাতিসংঘ ভিন্নমত পোষণকারীদের ভয় দেখানো এবং হয়রানির ব্যাপারে জিরো-টলারেন্স নীতি মেনে চলে এবং জাতিসংঘ বিশ্বাস করে যে, আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা প্রতিশোধমূলক মামলাগুলির প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়াকে শক্তিশালী করব এবং বার্ষিক প্রতিবেদনগুলিতে এই ধরনের ঘটনাগুলি চিহ্নিত এবং নথিভুক্ত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। আমরা এই বিষয়ে তথ্য প্রচার জোরদার করবো।
গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচআরসি প্রধান ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ইলেজ ব্র্যান্ডস কেহরিস বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা উৎপীড়নের শিকার ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোর সঠিক সংখ্যা তুলে আনতে পারেননি। বাস্তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বহুমুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রতিহিংসামূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন তা বাড়ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন এলেজ ব্র্যান্ডস কেহরিস। খবর এএফপির।