বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অর্ধকোটি মানুষ। কখন এই ভয়াবহ পরিস্থীতির ভিতর থেকে এই সিলেট ও সুনামগঞ্জের ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বেরিয়ে আসতে পারবে তা এখনও অজানা। তবে সরকারি-বেসরকারি, আধা-সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা অভিযান অভ্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গরা। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থা বন্যার্তদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল এসএম সাফি উদ্দিন আহমেদ গত রোববার বিকেলে বন্যা কবলিত সিলেট পরিদর্শন করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সেনাবাহিনী বন্যা কবলিত এলাকায় সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য একদিনের ব্যবধানে ৭০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহ্বানের পর দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মাধ্যমে তার কাছে এই টাকা পাঠিয়েছেন। সোমবার (২০ জুন) সকালে হবিগঞ্জ থেকে ফে// সবুক লাইভে এসে ও ফোনে দেশের জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে সুমন এ তথ্য জানিয়েছেন। ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সিলেটে ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে ভয়াবহ বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বন্যার্তদের সহায়তার জন্য আমি গত পরশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছিলাম, আপনারা যে যেভাবে পারেন, আমাকে সহযোগিতা করেন। দেশে-বিদেশে সবার কাছে এই আহ্বান জানিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে আমি বন্যার্তদের কাছে যেতে চাই। আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত একদিনের ব্যবধানে ৭০ লাখ টাকা পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ৫২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে আমার কাছে এসে পৌঁছেছে।
বাকি ১৮ লাখ টাকা আসার পথে। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে, আজকের পর থেকে আমার দায়িত্ব অনেক বেশি বেড়ে গেছে। সবাই আমাকে এত বিশ্বাস করেছেন, এটা আমার জীবনের বড় পাওয়া। এজন্য সবার কাছে কৃতজ্ঞ। সুমন বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের এই টাকা আমার ফুটবল টিমের সদস্যদের নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বন্যার্তদের মাঝে বণ্টন করব। ফুটবল টিমের সদস্যরাও বন্যার্তদের কষ্ট লাঘবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। আপনাদের কষ্টের টাকায় কেনা সামগ্রী আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসব। আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে দিলেন, একটা মানুষের জীবনের এর চেয়ে আর বড় অর্জন হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ এই সহযোগিতা পাঠিয়েছেন। এখন আমার দায়িত্ব হলো আপনাদের প্রতিটি টাকা কীভাবে খরচ হলো, সেটার হিসাব রাখা। যারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একে অন্যকে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস না করলে একদিনের ব্যবধানে ৭০ লাখ টাকা কীভাবে একজনের কাছে চলে আসে। আমি এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখব।
উল্লেখ্য, গত রোববার সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও সার্বিক পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। আরও বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া অধিদফতরের এই সংবাদে পুনরায় আতঙ্কে পড়েছেন বন্যার্তরা। সিলেট ও সুনামগঞ্জের ২৪টি উপজেলার অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পরেছে। কোথাও কোনো সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা নেই। বন্যাপ্রবণ এলাকায় খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও গবাদি পশুর খাদ্যের চরম ঘাটতি এখনই পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক জায়গায় গবাদি পশু প্রয়াতও হয়ে গেছে। ভেসে গেছে চাষের মাছ, মুরগি। অন্যদিকে, অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ও বাড়িতে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহের জন্য আবেদন করেছেন।