সম্প্রতি রহিমা বেগম নামে এক নারীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। মা রহিমা বেগমের সন্ধান পেতে মেয়ে মরিয়ম মান্নান সংবাদ সন্মেলন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পরে পুলিশের তৎপরতায় ফরিদপুর থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধারের পর ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টির সাথে পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা মেলে । মরিয়মের ডিএনএ পরীক্ষা নিয়ে নতুন তথ্যের সন্ধান মিলেছে।
ফুলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মোতালেব চৌধুরী দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম বলেন, আবেদন বাতিল চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা অভ্যন্তরীণ বিষয়। এগুলো মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করা যাবে না। এতে আমাদের তদন্তে সমস্যা হতে পারে।
খুলনার আলোচিত তরুণী মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা খাতুনকে উদ্ধার হওয়ায় আদালতে মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন বাতিলের আবেদন করা যাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। জীবিত উদ্ধার সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুলিশের হাতে আসার পর আদালতে ডিএনএ পরীক্ষা বাতিলের আবেদন করা যাবে । তবে রহিমা খাতুনকে উদ্ধারের ১০ দিন অতিবাহিত হলেও বিষয়টি আদালতকে জানানো হয়নি।
২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মরিয়ম মান্নান ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় মা রহিমা খাতুনের লা/শ তল্লাশি করতে যান। এ সময় ছবিতে শরীর দেখে কপাল, হাত ও সালোয়ার-কামিজ দেখে দাবি করা হয় লাশটি তার মায়ের। এ অবস্থায় ডিএনএ পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। এদিন মরিয়ম মান্নান ওই থানায় ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করে চলে যান।
পরদিন শনিবার সকালে পুলিশ আদালতে আবেদনটি অনুমোদনের জন্য জমা দেয়। কিন্তু ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে রহিমাকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। তবে পরদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফুলপুর থানা পুলিশ উদ্ধারের বিষয়টি আদালতকে জানায়নি।
ফলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক। রোববার বিকেলে ফুলপুরের ৬ নম্বর আমলী আদালতের বিচারক একেএম রওশন জাহান এ আদেশ দেন।
এ সময় পুলিশ দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, যেহেতু রহিমাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তাই মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ডিএনএ পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। ফলে দ্রুত আবেদনপত্র আদালতে দাখিল করে বাতিল করা হবে। কিন্তু মহিলাকে উদ্ধারের ১০ দিন অতিবাহিত হলেও উদ্ধারের বিষয়ে আদালতকে জানানো হয়নি।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালত পরিদর্শক মো.জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, রহিমাকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য তার মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষার আর প্রয়োজন নেই। ডিএনএ পরীক্ষা বাতিলের আবেদন এখনো আদালতে জমা না দেওয়ায় কারন ফুলপুর থানা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।
জানতে চাইলে ফুলপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল মোতালেব চৌধুরী দেশের জনপ্রিয় একটি সংবাদমাধ্যম বলেন, আবেদন বাতিল চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা অভ্যন্তরীণ বিষয়। এগুলো মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করা যাবে না এতে আমাদের তদন্তে সমস্যা হতে পারে।
বিষয়টি অভ্যন্তরীণ হওয়ার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রহিমা খাতুনকে উদ্ধারের বিষয়টি আপনারা (মিডিয়া কর্মীরা) যতটা জানেন, আমিও ততটুকু জানি। কিন্তু ওই নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে জানার পর খুলনার দৌলতপুর থানা থেকে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন ইয়েস (পুনরুদ্ধারের লিখিত কাগজ) বাতিলের আবেদন জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারছি না। অথবা জীবিত উদ্ধারের কাগজপত্র এনে আদালতে জমা দিতে হবে। এগুলো এখন মিডিয়ায় না বলে গোপন রাখাই ভালো বলে মনে করি। জমা দেওয়ার পর জানানো হবে।
এর আগে গত ২৭ আগস্ট রাতে খুলনা নগরীর মহেষ্যপাশা গ্রাম থেকে রহিমা বেগম নামে এক নারী নিখোঁজ হন। মা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আন্দোলনে করেন মরিয়ম মান্নান ও তার বোনেরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাটি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর উপজেলার বাওলা পূর্বপাড়া গ্রাম থেকে বস্তায় অজ্ঞাত এক নারীর লা/শ উদ্ধার করে ফুলপুর থানা পুলিশ। নিখোঁজ ব্যক্তির মেয়ে মরিয়ম মান্নান লা/শটি তার মায়ের বলে দাবি করেছেন।
২৩ সেপ্টেম্বর সকালে মরিয়ম মান্নান থানায় এসে লা/শের ছবি দেখে নিশ্চিতভাবে বলেন, লা/শ, কপাল, হাত ও সালোয়ার-কামিজ তার নিখোঁজ মায়ের। মাকে চিনতে তার ভুল হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ডিএনএ পরীক্ষার পরামর্শ দিলে তিনি আবেদন করেন। পরে অনুমতির জন্য জেলা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম রওশন জাহানের আদালতে আবেদনটি তোলা হয়। কিন্তু বিচারক অনুমতি দেওয়ার আগেই রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
প্রায় এক মাস ধরে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা থেকে তার মা নিখোঁজ থাকার অভিযোগে মরিয়ম মান্নানের পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে রহিমাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, রহিমা বেগমকে জীবত উদ্ধার হওয়া মরিয়মের ডিএনএ পরীক্ষা বিষয়টি সামনে আনতে চায় না পুলিশ। তবে বিষয়টি নিয়ে তথ্যটি কেন চাপিয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে সেটি জানানো হয়।