বিএনপি দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষমতার বাহিরে থাকায় সাংগঠনিক ভাবে দলের দুর্বলতা তৈরী হয়েছে। তবে দীর্ঘ দিনের এই সমস্যাকে কাটিয়ে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আগামী নির্বাচনে প্রতিটি আসনে মনোনয়ন প্রার্থীদের সক্রিয় হওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে দলের হাই কমান্ড থেকে। যদিও বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না সেজন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।৩০০ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে দল থেকে যা বলা হল।
বিএনপি অবশ্য নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে যাবে না বলে অনড়। তবে একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার খসড়াও তৈরি করতে চায় দলটি। যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রার্থী নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিতে পড়তে না হয়। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কৌশলগত কারণে প্রায় প্রতিটি আসনেই এক বা একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নের চিঠি দিতে হয়েছিল বিএনপিকে। মূলত তখন কিছু বিষয় বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। তার মধ্যে একটি ছিল, মনোনয়ন পাওয়ার জন্য লবিং করলেও বাস্তবে নিজের এলাকায় অবস্থান তৈরি করতে না পারা। সরকার ও প্রশাসনের ভয়ে নির্বাচনকালীন নিষ্ক্রিয়তা। ভুল তথ্য উপস্থাপন করে দলীয় মনোনয়নের চিঠি পাওয়া এবং নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে থাকা। মোদ্দা কথা উল্লেখযোগ্য পরিমান প্রার্থীর একেবারেই জনসম্পৃক্ততা না থাকা।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আসনভিত্তিক মনোনয়ন নিশ্চিত করার আগে আগ্রহীদের এলাকাভিত্তিক সক্ষমতা যাচাই করতে চায় বিএনপি। একটি সূত্র জানায়, প্রার্থীরা তাদের সংসদীয় আসনে আন্দোলন বেগবান করতে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছেন তা মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গত ১৬ আগস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ২২শে আগস্ট জেলা উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেইসাথে কেন্দ্র থেকে এগুলো মনিটরিং করার সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির হাইকমান্ডের এমন সিদ্ধান্তে খুশি তৃণমূল বিএনপি ও স্থানীয় নেতারা। তারা মনে করছে এমন সিদ্ধান্তে শুধু রাজধানী ভিত্তিক দলীয় রাজনীতির দৌরাত্ম্য কমবে। প্রার্থীদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়বে। নির্বাচনের কিছুদিন আগে কেন্দ্র থেকে চিঠি নিয়ে এসে ক্ষমতা জাহিরের অবসান ঘটবে।
আসন ভিত্তিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সক্রিয় হলে তৃণমূলে এর কেমন প্রভাব পরতে পারে এ বিষয়ে জানতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান’কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, যারা নির্বাচন করতে চায় তাদেরকে আগে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে প্রমান করতে হবে। যে যেই নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী, সকলের জন্যই তো বিএনপির দুয়ার খোলা আছে। কিন্তু তাদেরকে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। আর অবশ্যই তৃণমূলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সন্দেহ নেই।
প্রসঙ্গত, পূর্বের মত যাতে বিভ্রান্তিতে পড়তে না হয়ে সে কারনে আগে থেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সক্রিয়তা যাচাইয়ের মাধ্যমে মনোনয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। সে ভাবেই আগাতে চায় বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছে।