হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি এবার সরকারের ‘একতরফা’ ভোট প্রত্যাখ্যান করতে প্রণোদনা কর্মসূচি আনছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দেশবাসীকে ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত হরতাল থাকবে বিএনপি। এদিকে সারাদেশে এই ভোট বিরোধী প্রচারপত্র বিতরণ করা হবে।
৭ জানুয়ারি জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতে পারে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ করেছে।
মাঠপর্যায়ের কর্মসূচির পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা বয়কটের জন্য পৃথক আহ্বান ভোটারদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার সরকারের কৌশলকে অনেকাংশে অকার্যকর করে তুলতে পারে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আকস্মিক এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভোটের দিন পর্যন্ত সভা-সমাবেশ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে ভোটের দিন পর্যন্ত হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন নীতিনির্ধারণী নেতারা। মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি রয়েছে। এরপর আবার হরতাল বা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়। নীতিনির্ধারণী নেতারা বিশেষ করে জানুয়ারির প্রথম দিকের নির্বাচনী সপ্তাহে সব বিরোধী দলকে সমন্বয় করতে সর্বাত্মক কর্মসূচি ঘোষণার কথা ভাবছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোটের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নানা কৌশল নিচ্ছে সরকার। একদিকে তারা ৩০০ আসন ভাগাভাগি করছেন, অন্যদিকে নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী করছেন। সরকারের এই কৌশলের বিরুদ্ধে মাঠপর্যায়ে কর্মসূচির পাশাপাশি ভোট বিরোধী প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করছে দলগুলো। প্রচারপত্রটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ‘একতরফা’ ভোট বিভাজন প্রত্যাখ্যান করতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাবে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন জোট ও দলগুলো আলাদা আলাদা লিফলেট বিতরণ করবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, জনসমর্থন পাওয়া অধিকাংশ দলই এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে।
এরই মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ‘প্রহসন নির্বাচন বাতিল, দুঃশাসন হটিয়ে দাও’ শিরোনামে প্রচারপত্র বিতরণ শুরু করেছে। সিপিবি প্রচারপত্রে বলেছে, “সব দলের অংশগ্রহণে এই নির্বাচন হচ্ছে না। নতুন দল তৈরি করে, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে আরও দলের অংশগ্রহণ দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, নির্বাচন আসলে একতরফা প্রহসন হতে চলেছে। জনগণ ভোট দিতে আগ্রহী নয়।এটা বুঝতে পেরে ভোটকেন্দ্রে জনগণের উপস্থিতি দেখাতে ভয়ভীতিসহ নানা কৌশল অবলম্বন করছে সরকার।এ অবস্থায় ২০২৪ সালের ভোট প্রহসনের ভোটে পরিণত হবে।
ইসলামী আন্দোলনের আমীর চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে বর্তমান সরকারের অধীনে ‘একতরফা ও ভুয়া’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিএনপির সঙ্গে একযোগে আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, জনসমর্থন পাওয়া অধিকাংশ দলই এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলস্বরূপ, মাঠপর্যায়ের কর্মসূচির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের জন্য পৃথক আহ্বান ভোটারদের কেন্দ্রে আনার সরকারের কৌশলকে অনেকাংশে অকার্যকর করে দিতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগাম সতর্কতা হিসেবে সরকার হয়তো নির্বাচনবিরোধী অপপ্রচার নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল রাতে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এবারের নির্বাচনের ফলাফল আগেই ঠিক হয়ে গেছে। ওই দিনই তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে। বাংলাদেশের জনগণ দলমত নির্বিশেষে সম্মিলিতভাবে এই প্রহসন, তামাশা ও প্রহসন নির্বাচন বর্জন করবে।