Sunday , November 10 2024
Breaking News
Home / International / এবার ভিসার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল যুক্তরাজ্য

এবার ভিসার বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল যুক্তরাজ্য

অভিবাসন রোধে ভিসা নীতি কঠোর করার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাজ্য। সোমবার স্বরাষ্ট্র সচিব জেমস ক্লেভারলি পাঁচ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

গত মাসে, যুক্তরাজ্য সরকারের একটি পরিসংখ্যান দেখিয়েছে যে ২০২২ সালে ৭৪৫,০০০ মানুষ দেশটিতে অভিবাসী হয়েছেন, যা যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সেই উদ্বেগের ফলেই নতুন এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে দেশটির সরকার।

পরিকল্পনায় বলা পরিবর্তনগুলির মধ্যে দক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি। যেখানে আগে তাদের ন্যূনতম বেতন ছিল ২৬ হাজার ২০০ পাউন্ড, এখন তা বাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড করা হয়েছে। এবং এই বেতন বৃদ্ধির ফলে, ৩,০০,০০০ নতুন অভিবাসী যারা গত বছর যুক্তরাজ্যে আসার যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিল, ক্লেভারলি বলেছেন, তারা আর আসতে পারবেন না।

এছাড়াও, নতুন স্কিমে পারিবারিক ভিসার জন্য ন্যূনতম আয়ের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফলে এখন থেকে পারিবারিক ভিসায় যুক্তরাজ্যে যেতে হলে আবেদনকারীর ন্যূনতম আয় হতে হবে ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড।
পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তিনি আরও বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে হেলথ অ্যান্ড কেয়ার ভিসার অপব্যবহার করা হচ্ছে। ক্লেভারলি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে।

অভিবাসন নীতি অবশ্যই স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও টেকসই হতে হবে।’
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপিরা গত মাসে ২০২২ সালের অভিবাসন পরিসংখ্যান প্রকাশের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং তার সরকারকে দেশে অভিবাসন কমানোর পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছেন।

দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা এত বৃদ্ধি সুনাক এবং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কারণ তারা ২০১০ সাল থেকে অভিবাসন কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। দলটি ব্রেক্সিট ভোটের পর যুক্তরাজ্যের সীমান্তের ‘নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেওয়ার’ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।

তবে ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করেই অভিবাসীদের সংখ্যা কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার আগে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ডেভিড ক্যামেরন একবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্যে অভিবাসীর সংখ্যা বছরে এক লাখের নিচে নামিয়ে আনা হবে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাজ্যে অভিবাসন নীতি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে ‘যা প্রয়োজন তা করার’ নির্দেশ দিয়েছেন।

নতুন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীদের তাদের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে আনতে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর বাইরে যে সংস্থাগুলি তাদের বর্তমান বেতন কাঠামোর থেকে ২০ শতাংশ কম বেতন দিচ্ছে, তারা অভিবাসী শ্রমিকদের আনতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে পড়তে আসে তারা চাইলে তাদের পরিবারের সদস্যদের যাতে দেশে আনতে না পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আগামী বসন্ত থেকে এসব পরিবর্তন কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব। সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই নীতির ফলে গত বছরের তুলনায় আগামী বছর অন্তত তিন লাখ কম অভিবাসী আসবে।

নতুন নীতিমালার কারণে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীরা চাইলেই আর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসতে পারবে না। এতে অভিবাসীর সংখ্যা অর্ধেকে কমে যাবে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নতুন পরিকল্পনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে, লেবার এমপি ইভেট কুপার বলেছেন, সোমবারের ঘোষণাটি দেখিয়েছে কিভাবে টোরিরা অভিবাসন এবং অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর ধরে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, কিন্তু রক্ষণশীলরা উল্লেখযোগ্য টেকসই সংস্কার আনতে পারেনি।

অন্যদিকে ব্রিটেনের ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসনের সাধারণ সম্পাদক ক্রিস্টিনা ম্যাকানিয়া নতুন অভিবাসন নীতিকে নিষ্ঠুর বলেছেন। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিচর্যার ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনবে।

মাকানিয়া বলেন, ‘অভিবাসী শ্রমিকরা এখানে আসতে উৎসাহিত হয়েছিল। কারণ উভয় সেক্টরেই শ্রমিকের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এই অভিবাসী শ্রমিকদের ছাড়া হাসপাতাল ও কেয়ার হোম চলতে পারে না।

তবে নতুন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি। প্রাক্তন মন্ত্রী সাইমন ক্লার্ক এটিকে একটি “বাস্তববাদী” এবং “বিশ্বাসযোগ্য” পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান বলেছেন যে তিনি ক্লেভারলির নতুন পরিকল্পনায় প্রভাবিত নন। তার মতে, নতুন পরিকল্পনায় অনেক দেরি হয়েছে এবং আরও অনেক কাজ করা উচিত ছিল, যা করা হয়নি। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুভব করেছিলেন যে অনেক কাজ করা উচিৎ ছিল, যেটা করা হয়নি। বিশেষত অভিবাসী কর্মীদের বেতন এবং অভিবাসী শিক্ষার্থীদের লাগাম টানার ক্ষেত্রে অনেক কাজ করার ছিল বলে মনে করেন সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

About bisso Jit

Check Also

ট্রাম্পের নতুন নীতি: জন্মসূত্রে আর নয় মার্কিন নাগরিকত্ব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়কে তার রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *