সাম্প্রতিক সময়ে তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশে আসা এক প্রেমিক তার প্রেমিকাকে নিয়ে ফিরে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের বরিশালে আসেন। ওই যুবকের নাম প্রেমকান্ত। তবে জানা যায় মেয়েটি সাবালিকা নন, যার কারণে বাংলাদেশের আইন অনুসারে ওই মেয়েটিকে বিয়ে দেয়া আইনত দণ্ডনীয়। এরপর ওই মেয়েটির পরিবার রাজি না হওয়ায়, পুলিশ জানিয়েছে যে, মেয়েটিকে তার সাথে বিবাহ দেওয়া সম্ভব নয়। তাকে সেখান থেকে বাসে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপরও তিনি পুনরায় বরিশালের ফিরে এসেছেন। বর্তমানে তিনি শহরের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে কটূ’ক্তি করছেন।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ হালদার গনমাধ্যমকে জানান, গত রোববার (৩১ জুলাই) প্রেমকান্ত নামে ওই যুবক থানায় আসেন। আমি তাকে তার ঘরে বসিয়ে বিকেলে তার যা খুশি খাওয়াই। আমি সব শুনেছি। তিনি যে মেয়েটির সাথে ভিডিও কলে কথা বলেছিলাম তার সাথে কথা বলেছি। মেয়েটি সম্পূর্ণ নাবালিকা। পরিবার তাকে প্রেমকান্তের হাতে তুলে দিতে রাজি নয়। আমি তখন বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনে অবহিত করি। হাইকমিশন তাকে ভারতে পাঠানোর সুপারিশ করে।
এই সিদ্ধান্ত প্রেমকান্তকে জানানো হলে তিনি রাজি হন এবং বলেন যে তিনি বিমানে যাবেন। বিদেশি নাগরিক হিসেবে তার যেন নিরাপত্তার কোনো অভাব না থাকে, তাই আমরা তাকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে বাসে করে ঢাকায় নিয়ে যাই। এরপর তিনি যদি বরিশালে ফিরে এসে বিভিন্ন কথা বলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চান, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।
ওসি জানান, প্রেমকান্ত মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ের পরিবার রাজি নয়। ফলে আমি কোনোভাবেই মেয়েটিকে ওই যুবকের হাতে তুলে দিতে পারি না। কয়েকদিন ভিডিও কলে কথা বলার পর বরিশালে এসে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে যা বলছে, যা করছে তাকে হয়রানি বলে মনে হয়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আইন অনুযায়ী কেউ কারো দ্বারা হয়”রানির শিকার হলে থানায় লিখিত অভিযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও গনমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি প্রেমকান্ত। তাকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আনসার-ভিডিপি কার্যালয়ের সামনে পাওয়া গেলেও কথা বলেননি। ভিডিও বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানালেও তিনি বলেছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তিনি। এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।
একজন নাবালিকা মেয়েকে বাংলাদেশের আইন ভাঙতে বলাটা অযৌক্তিক কিনা জানতে চাইলে প্রেমকান্ত চলে যান।
অন্যদিকে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পরিচয় ও ঠিকানা প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ভিডিও কলে কথা বলার পর কেউ এসে বললে বিয়ে করবে এটা অসম্ভব। বাংলাদেশে আইন আছে, পারিবারিক সিদ্ধান্ত আছে- এগুলো মানতে হবে। কিন্তু অপরিচিত কেউ এসে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে এভাবে বললে আমরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ি।
প্রেমকান্ত নামে এক ভারতীয় যুবক দাবি করেছেন, প্রেমের কারণে তিনি বরিশালে এসেছেন। গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশে আসার পর বান্ধবীর নির্দেশে বরিশালে আসেন। সে এসে তার বান্ধবীর সাথে দেখা করল। কিন্তু তার বান্ধবীর আরেক প্রেমিক তাকে ধরে মা”রধর করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর তিনি বিমানবন্দর থানায় বিষয়টি জানালে তারা তাকে আটক করে সেখানে পাঠায়। এখন সে তার প্রেমিককে না পেলেও শেষবারের মতো দেখা করতে চায়।
প্রেমকান্ত জানিয়েছেন, তার পড়াশোনা সম্পর্কে। তিনি নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া তিনি আরও জানান, তিনি বেশ ভালো নাচ করতে পারে। বরিশাল বিভাগের বরগুনার ওই মেয়েটির সাথে নাচের পারদর্শীতা দেখিয়ে পরিচয় হয়। এরপর মেয়েটির সাথে নিয়মিত কথা বলে। কথা বলার এক পর্যায়ে মেয়েটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলেও দাবি করেন। জানা গেছে মেয়েটি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশোনা করেন।