যুক্তরাষ্ট্রে খালিস্তানপন্থী শিখ নেতা গুরপন্তওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হ”ত্যার চেষ্টা নস্যাৎ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এই হ”ত্যাচেষ্টার পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ওয়াশিংটন। প্রথমত, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস এই খবর জানিয়েছে।
এদিকে মার্কিন কর্মকর্তারা ভয়েস অব আমেরিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা বুধবার বলেছে যে, মার্কিন মাটিতে একজন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হ”ত্যা করার জন্য ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের পরিকল্পনা খুবই গুরুতর বিষয়। ওয়াশিংটন ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লির কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছে। আমরা বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। মার্কিন সরকার এটিকে ভারতের সর্বোচ্চ স্তর বলে ঘোষণা করেছে। ভারতও এ নিয়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে যে, এ ধরনের কার্যকলাপ তাদের নীতি নয়। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন ভয়েস অব আমেরিকাকে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার তদন্ত শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছে। সেই বৈঠকে কিছু অপরাধী, বন্দুকধারী, স”ন্ত্রাসী এবং অন্যদের মধ্যে যোগসূত্রের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনেক তথ্য প্রকাশ করা হয়। এসব তথ্য দুই দেশের জন্যই উদ্বেগের। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা প্রয়োজনীয় ফলোআপ পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে ভারতও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। সংশ্লিষ্ট দফতর তাদের কাজ করছে। ভারত এই সব তথ্য খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়ে থাকে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এটা গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর ভারতকে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। তবে ঠিক কীভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছে তা প্রতিবেদনে বলা হয়নি।
খালিস্তানপন্থী নিষিদ্ধ সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর নেতা পান্নুন। তাকে হত্যা চেষ্টা করায় শুধু কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানিয়েই থেমে যায়নি যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি তারা এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। নিউ ইয়র্কের একটি আদালতে সেই আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তবে ওই বিষয়টি জনসমক্ষে আনা হবে নাকি তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে পান্নুন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একজন মার্কিন নাগরিককে যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে তা এ দেশের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমি বিশ্বাস করি জো বাইডেন প্রশাসন এই ধরনের যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলায় সুসজ্জিত। তবে মার্কিন প্রশাসন তাকে হ”ত্যার চেষ্টার বিষয়ে আগে সতর্ক করেছিল কিনা তা স্পষ্ট করেননি পান্নুন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডায় বেশ কয়েকজন শিখ নেতাকে হ”ত্যার কারণে অটোয়া-দিল্লি সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছিল। গত জুনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো খালিস্তানপন্থী কর্মী হরদীপ সিং নিজ্জার হ”ত্যার জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর, ট্রুডো পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে এই হ”ত্যাকাণ্ডে “হাত” হিসেবে ভারতকে অভিযুক্ত করেন। এমন অভিযোগের জবাবে ভারত বলেছে, ট্রুডোর দাবি আদৌ সত্য নয়।
নয়াদিল্লি পাল্টা দাবি করে কানাডার কাছে যে, তথ্য রয়েছে তা ভারতকে দেওয়া উচিত। এরপর ভারত ও কানাডা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করতে থাকে। ভারতের দাবি, কানাডা কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না। আর কানাডার দাবি, ভারত তদন্তে সহযোগিতা করছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও কানাডা পরে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। দুই দেশ একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের পথে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রও কানাডাকে বলেছে যে নিজ্জার হ”ত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত। কানাডা শেষ পর্যন্ত ভারতের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ উত্থাপন করেনি। যদিও এখন দুই দেশের সম্পর্ক আবার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।