প্রেমের টানে দেশান্তরি হওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে ভালোবাসার মানুষকে পেতে ধর্ম, সংস্কৃতি, ছাড়তে পিছুপা হয় না তারা। শুধু প্রিয় মানুষটিকে পেতে সর্বস্ব ত্যাগ করেন। তেমনি ঘটনা এবার ঘটটেছে হবি হবিগঞ্জের যুবক আব্দুর রকিবে জীবনে।সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ব্রাজিলিয়ান নারী সাথে। অবশেষে ব্রাজিলিয়ান নারী সেওমা বিজেরাকে বিয়ে করেন পাড়ি দেন ব্রাজিলে।
ব্রাজিলিয়ান নারী সেওমা বিজেরাকে বিয়ে করে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার হালিতলা গ্রামের আব্দুর রকিব। এরপর ভিসা জটিলার কারণে বিয়ের ২৯ দিনের মাথায় স্বামীকে ছাড়াই নিজ দেশে ফিরে যান ওই নারী। এরপর অবশ্য রকিবকে ব্রাজিল নিয়ে যান সেওমা। তবে দুই দফায় ব্রাজিল গিয়ে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন রকিব।
শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে রকিবের ব্রাজিল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকে নবীগঞ্জ জুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
৪৭ বছর বয়সী সেওমা বিজেরা পেশায় একজন শিক্ষকা। তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলের জননী। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছদের পর ২০১৬ সালের শুরুতে নবীগঞ্জের হালিতলা (বারৈকান্দি) গ্রামের বাসিন্দা আসকান উদ্দিনের বড় ছেলে আব্দুর রকিবের সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। তখন রকিব মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। একপর্যায়ে ব্রাজিলিয়ান নারী সিওমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে রকিবের।
৯ মাস প্রেমের পর ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আসেন সিওমা। সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রকিব। সেখান থেকে তারা নবীগঞ্জের হালিতলা গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। সেওমা ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রাকিবকে বিয়ে করেন। এরপর ২৯ দিন হালিতলা গ্রামে অবস্থান করেন।
ভিসা জটিলতায় ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি সেওমা দেশে ফিরে আসেন। ২০১৮ সালে রকিবের জন্য ব্রাজিলের ভিসা পাঠান। পরে ব্রাজিলে পাড়ি জমান রকিব। ব্রাজিলে গিয়ে এক বছর সেওমার সাথে অবস্থান করেন। কিন্তু সেখানকার সংস্কৃতি, পরিবেশ ও খাবারের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন রাকিব। ২০২০ সালের শুরুতে আবারও সেওমার কাছে যান তিনি।
ব্রাজিলে অবস্থানকালে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে পরিচয় হয় রকিবের। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০২১ সালে রকিব কিছু বাংলাদেশির সাথে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যান। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকালে দালালদের খপ্পরে পড়ে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা জরিমানাও গুনতে হয় তাকে। রকিবের পরিবার বাংলাদেশ থেকে তাকে জরিমানার টাকা পাঠায়। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন রকিব। তবে সেওমার সঙ্গে রকিবের এখনও যোগাযোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি তার পরিবার।
রাকিবের প্রতিবেশী হালিতলা (বড়ইকান্দি) গ্রামের বাসিন্দা তালেব মিয়া দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রকিবের পারিবারিক সূত্র তাকে জানায়, দ্বিতীয়বার ব্রাজিলে যাওয়ার পর সেখানে বাংলাদেশিদের সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর তাদের নিয়ে অবৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করে সে। এসময় দালালদের খপ্পরে পড়ায় রকিবকে ৫-৬ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। তখন আত্মীয়-স্বজনরা মিলে তাকে জরিমানার টাকা পাঠান। বর্তমানে সে আমেরিকায় রয়েছে বলে জানি।
এ প্রসঙ্গে রকিবের বাবা আসকান উদ্দিন দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমার ছেলে ভালো আছে। খুব শিগগিরই তিনি বাংলাদেশে আসবেন।
ছেলে ও বিদেশি পুত্রবধূর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুত্রবধূর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলের সাথে যোগাযোগ আছে কিনা জানি না।
তবে রকিব কোথায় তা বলতে রাজি হননি তিনি। এছাড়া ছেলে রাকিবকে নিয়ে কোনো সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ফোন কেটে দেন আসকান উদ্দিন।
প্রসঙ্গত, বর্তমান রকিব আমেরিকায় আছেন কিন্তু বিষয়টি তার পরিবার জানাতে চায় না। তবে পরিবার থেকে রকিব ভালো আছেন বলে জানানো হয়েছে।