সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি যেন একটি নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের উচ্চ পদে থাকা অধিষ্ঠিত কর্মকর্তা কিংবা সচিবালয় পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে থাকে দুর্নীতির মাধ্যমে। টাকা আত্মসাতের বিষয়টি যাতে দুর্নীতি দমন সংস্থার নিকট ধরা না পড়ে সেজন্য অনেক সময় নগদ টাকা বাড়িতে রেখে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এবার ১০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধারের ঘটনা ঘটলো এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে।
ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আবারও কলকাতায় অভিযান চালিয়েছে। ৫০ লাখ বা ১ কোটি নয়, এ বার কলকাতার এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে নগদ প্রায় ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে ইডি।
স্থানীয় মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ইডি আধিকারিকরা এখনও পর্যন্ত ১০ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছেন। ব্যাংক থেকে আনা মেশিনে টাকা গণনা চলছে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনও টাকা আসছে বলে জানান তারা। সেজন্য আরও টাকা গণনার মেশিন চালু করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ওই ব্যবসায়ীর নাম আমির খান। তিনি কলকাতার গার্ডেনরিচ এলাকার বাসিন্দা। এ বাড়ি থেকে খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা জানান, খাটের নিচে ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোটের বান্ডিল পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০০ টাকার বান্ডিলও পাওয়া যাচ্ছে।
গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে কলকাতার একাধিক টেলিভিশন চ্যানেল জানিয়েছে, ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির খাটের নিচ থেকে টাকা ভর্তি ট্রাঙ্কে এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইডি আধিকারিকরা আমির খানের দোতলা বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় তার বিছানার নিচ থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো টাকা বের হতে থাকে।
অভিযানের পর বাড়ির সদস্যদের জেরা করেন ইডি গোয়েন্দারা। কিন্তু অর্থের উৎস সম্পর্কে কেউ স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে কলকাতার সংবাদমাধ্যমের দাবি, কিছু বেআইনি লেনদেনের জন্য এই বিপুল পরিমাণ টাকা ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে মজুত করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জুলাইয়ের শুরুতে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কলকাতার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির বাড়ি থেকে প্রায় ৫২ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল।
এর পরে, হাওড়া থেকে অন্য একটি অভিযানে, ঝাড়খণ্ডের চার বিধায়কের কাছ থেকে আরও ৪৮ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। এরপর কলকাতার কাছে উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে এক তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা।
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় এজেন্সি সিবিআই এবং ইডি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি এবং অপরাধ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করার সময় এই ধরনের অভিযান শুরু করেছে।
এই ঘটনার পর দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে সরকারকে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সেখানকার মানবাধিকার সংস্থা। কারণ কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়লেও এমনটি অনেক জায়গায় ঘটছে যেগুলো অন্তরালে থেকে যাচ্ছে। তবে ইডি জানিয়েছে তাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।