ক্ষমতাসীন সরকার দেশের সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সবাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। যার কারন হিসেবে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের কারনে দীর্ঘ দিন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অচলাবস্থার মুখে পড়ে। এই অবস্থা কাটতে না্ কাটতে যু/দ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। বিশ্বব্যাপি একটি মন্দা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে সেটি আরও ভয়াবহা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে মিতব্যয়ী হতে বলে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া রোগের অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যু/দ্ধ ও রাশিয়াকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ আরোপের কারণে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমন বাস্তবতায় পরিস্থিতি সাশ্রয়ী হওয়া, মিতব্যয়িতা এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমরা সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদাঙ্ক দেখতে পাচ্ছি, এর প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে।
তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি থাকে না। যার পক্ষে যা সম্ভব, তা যেন উৎপাদন করে।
ছাদ বাগানে উৎসাহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে কিছু উৎপাদন করা গেলে বাজারের চাপ কমবে।
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলব, উৎপাদন বাড়াতে সবাইকে সক্রিয় হতে হবে, যাতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের ব্যবস্থা আমাদের নিজেদের করে নিতে হবে।
দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ শুধু আমাদের দেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। তারা সেখানে রেশনিং করছে। তাকাজেই আমাদেরও সেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন পণ্যের দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, সেহেতু আমাদের কৃচ্ছ্রসাধন করতে হচ্ছে।
“এখন থেকে আমাদের সবাইকে কঠোর হতে হবে। সঞ্চয় করতে হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনো কিছুর জন্য অতিরিক্ত ব্যয় না হয়। কারণ বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, আপনি আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন, ইংল্যান্ড বলেন প্রতিটি জায়গায় কিন্তু…আজকে সেখানে তারা বিদ্যুৎ দিতে পারছে না, পানির ব্যবহার সীমিত করে দিতে নির্দেশ দিচ্ছে।
ইউরোপের কিছু দেশ বলছে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না, গরম করার ব্যবস্থা থাকবে না। আগামী শীতে তারা কী করবে তা নিয়ে চিন্তিত। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের মতো দেশ। আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। পূর্ব থেকে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে। সঞ্চয়ী হতে হবে। আর তাই উৎপাদন বাড়াতে হবে। যেখানেই সম্ভব উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা যেন সবসময় নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি। আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে যা সম্ভব, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে আমরা যেন সব সময় স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি। সে ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেসব প্রকল্প একেবারে আমাদের আশু শেষ করা প্রয়োজন, সেগুলো আমরা দ্রুত শেষ করব, যেগুলো এখনই প্রয়োজন নেই, সেগুলো আমাদের ধীরগতিতে হবে। আমরা অহেতুক টাকা ব্যয় করব না। এভাবেই আমাদের পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক মন্দা আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি বলেন,আমাদের যে বিপুল শ্রমশক্তি রয়েছে, তাদের এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। যুক্ত করতে হলে তাদের ট্রেনিং দিতে হবে; শিক্ষিত করতে হবে। আর দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তৈরি করতে হবে।
জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি আরও বলেন, সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আমরা আমাদের শ্রমশক্তি পাঠানোর উপায় খুঁজছি। আমরা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি নতুন জায়গা খুঁজে পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ইনক্রিমেন্টসহ বিভিন্ন দাবি সরকার বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আপনাদের পেশাগত সমস্যা বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই এর সমাধান হবে। আর আমি খোঁজ নেব কেন দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে।’
চাকরির পেছনে না ছুটে তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “আমরা একটি স্টার্টআপ প্রোগ্রাম করেছি। আমি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি।শুধু চাকরির পেছনে ছোটা না, তারাই চাকরি দিতে পারবে।
‘তারা নিজেরা স্বউদ্যোগে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলবে, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করছি। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি।’
প্রসঙ্গত, আগামী দিনের কথা চিন্তা করে সবাইকে সতর্ক থাকার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলার পরমর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন , আমরা সচেতন না হলে কোনো ভাবেই সামনের সমস্যগুলো মোকাবেলা করতে পারবো না।