এবার পুলিশের অনাকাঙ্খিত ঝামেলায় পন্ড হলো বিয়ের অনুষ্ঠান। জানা গেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় বিয়ে বাড়িতে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায় । আর এই হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত দশজন। এ ঘটনায় এখন পুলিশের বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে পুরো গ্রামবাসী।
বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের চেরমলগাঁও ভাদুড়িকান্দি গ্রামের সরদার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে এক বৃদ্ধার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের মধ্যে কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার মাকশাহার গ্রামের ভিক্ষুক সুলতান খারের স্ত্রী পেয়ারা বেগম (৬০), চরমলগাঁওয়ের ভাদুড়িকান্দি গ্রামের মো. শরীয়তুল্লাহ সরদার (২৬), শামীম বেপারী (১২), আমানুল্লাহ সরদার (৩৫), চৈতি আক্তার (২৪), মীম আক্তার (১৪), স্বপ্না আক্তার (১৫), সুমি আক্তার (১৪)।
আহতদের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকালে চেরমালগাঁও ভাদুড়িকান্দি গ্রামের জয়নাল মল্লিকের মেয়ে নুপুর আক্তার (১৮) বিয়ে হয়। বুধবার রাতে নূপুরের গায়ে হলুদ। দুপুর ১২টার দিকে চার তরুণী সাউন্ড বক্সে নাচছিলেন। ডামুড্যা থানার এসআই ফোদ হোসেনসহ দুই কনস্টেবল বশিরুল ইসলাম ও হাবিবুর রহমান পুলিশ পিকআপ থেকে নেমে হঠাৎ বিয়ে বাড়িতে ঢুকে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করেন।
বিয়ে বাড়ির লোকজন মারধরের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, সাউন্ড বক্স বাজাজের কেন? এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন ১০ জন। তাছাড়া পুলিশ বিয়ে বাড়ির প্লাস্টিকের কয়েকটি চেয়ার ভেঙে দিয়েছে। আহতদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে ডামুড্যা থানার এসআই সজল কুমার পালসহ পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল বিয়ে বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে।
আহত পেয়ারা বেগম বলেন, আমি দাড়িয়ে আমার ভাগ্নির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে পুলিশ আমাকে লাঠিসোটা দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। আমি হাঁটতে পারছি না, মনে হচ্ছে আমার পিঠের হাড় ভেঙে গেছে। আমি বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার স্বামী ভিক্ষা করে। চিকিৎসার টাকা কোথায় পাব? আমি ব্যথায় মরে যাচ্ছি।
মেয়েটির মামা ফারুক ভান্ডারী ও আহত আমানুল্লাহ সরদার, শামীম বেপারী, চৈতি জানান, পুলিশ এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে পারত। টেনে-হিঁচড়ে মারতে থাকে, যা অমানবিক। আমরা বিচার চাই।
ধানকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা রতন বলেন, আমার ইউনিয়নে একটি বিয়েতে রাতে সাউন্ড বক্স বাজছিল। পুলিশের এসআই ফাওয়াদ ও দুই কনস্টেবল এসে বিয়ে বাড়ির লোকজনকে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে চেয়ার ভেঙ্গে ফেলে, যা দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, ফাওয়াদ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।
ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফ আহমেদ জানান, রাতে ওই এলাকায় জোরে বক্স বাজানোর ঘটনায় তিনি ৯৯৯ নম্বরে কল করেন। পরে আমি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ ও বিয়ে বাড়ির লোকজনের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। পরে এসআই সজলসহ পুলিশের পাঁচ সদস্যের একটি দল বিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। ঘটনা শোনার পর তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে এর সমাধান করতে আসেন।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এই ঘটনায় এখন সবখানে শুরু হয়েছে বেশ সমালোচনা। বিশেষ করে বিয়ে বাড়ির মত একটি অনুষ্ঠানে গান বাজনা করা একটি স্বাভাবিক বিষয়।সেখানে কেন পুলিশ এমন হামলা চালাবে আর কেনই বা আগে থেকে না জানিয়ে পন্ড করবে বিয়ের অনুষ্ঠান এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সবাই।