ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিশ্বে চীনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩০০ বিলিয়ন ইউরো) বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা উন্মোচিত করেছে। উরসুলা ভন ডার লেয়েন যিনি ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে রয়েছেন তিনি বলেন, তথাকথিত “গ্লোবাল গেটওয়ে স্কিমে” ইইউ-এর বিনিয়োগ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর বিকল্প হবে৷ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের বিকল্প হিসেবে তিনি গতকাল মাস্টার প্ল্যানের বিস্তারিত একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন।
বিবিসি জানায়, ২০২৭ সালের মধ্যে ইইউর বিশাল বিনিয়োগ বৈশ্বিক অবকাঠামো, ডিজিটাল ও জলবায়ু প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। ইইউ সদস্যরা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট আশা করেন যে গ্লোবাল গেটওয়ে স্কিম নামের এই পরিকল্পনাটি একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে।
বিশ্বব্যাপী চীনা বিনিয়োগের ব্যাপারে ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, চীন প্রায়ই প্রতিকূল শর্তে এবং অস্বচ্ছ উপায়ে বিনিয়োগ করে থাকে, যা দরিদ্র দেশগুলোকে— বিশেষ করে আফ্রিকার কিছু দেশকে ঋণের ফাঁ’দে ফেলে চীনের উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। ইইউ’র দাবি, চীনের বিকল্প হিসেবে গ্লোবাল গেটওয়ে স্কিমের বিনিয়োগে স্থানীয়দের সুবিধার উপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর ফলে সুবিধা পাবে আফ্রিকা। এছাড়া বেসরকারি খাতকেও এসব বিনিয়োগে যুক্ত করা হবে। এসব কারণে ইউরোপীয়ান কমিশনের বিনিয়োগ কম ঝুঁ’কিপূর্ণ হবে।
গ্লোবাল গেটওয়ে স্কিম ঘোষণা করে এক সংবাদ সম্মেলনে উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, দেশগুলোর চীনের অফারের চেয়ে আরও ভালো এবং ভিন্ন অফার প্রয়োজন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বিনিয়োগ পরিকল্পনাটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রকৃত বিকল্প।’
তবে, চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ বেল্ট অ্যান্ড রোড এরই মধ্যে আফ্রিকা, ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলসহ ইউরোপের মানচিত্র পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। চীনের কসকো কোম্পানি পিরায়ুসের গ্রিক কন্টেনার পোর্টের দুই-তৃতীয়াংশে আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং চীনের রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন ক্রোয়েশিয়ার মূল অর্থাৎ কার্যকারিতার দিক থেকে বৃহৎ সেতুটি নির্মাণ করেছে।
উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে চীন বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো রয়েছে সেখানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বিশ্বের ১০০ টিরও অধিক সংখ্যক দেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে সমর্থন করার মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছে।
এর আগে, উন্নত দেশগুলির G-৭ জোট বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের যে দেশগুলো রয়েছে সেগুলো চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মো’কাবেলায় একটি বড় ধরনের অবকাঠামোগত সহায়তা প্যাকেজের পরিকল্পনা করেছিল। এর মাধ্যমে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায় G-৭। এবার চীনকে থামাতে এই বড় বিনিয়োগের বিশদ পরিকল্পনা সামনে আনলো ইইউ।