কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেন। এই ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছেন শতর্ধ্ব মনুসার আহমেদ। সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী আয়েশা বেগমও। হাতের লাগেজ এবং ব্যাগ। ট্রেনের ‘ই’ বগিতে এসব ব্যাগ বহন করতে সমস্যা হচ্ছিল তার। এমতাবস্থায় ওই বগির দায়িত্বে থাকা দুই ট্রেন বালা (মহিলা স্টুয়ার্ড) আসেন। তাদের মধ্যে একজন ব্যাগ নিয়ে গেল, এবং বাকি দুই যাত্রী তাদের সিটে নিয়ে গেল। এমন সেবা পেয়ে খুবই বিস্মিত এই সাবেক সরকারি কর্মকর্তা জুটি। কারণ ট্রেন সার্ভিস আগে কখনো দেখা যায়নি।
শুধু ট্রেনে চড়াই নয়, ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছনো পর্যন্ত বালা যাত্রীসেবা নিয়োজিত ছিল। ট্রেনের জানালা বন্ধ, খোলা। কারো প্রয়োজনে অবিলম্বে সাড়া দিন। যাত্রীদের নামানোর সময় ব্যাগ ধরে রাখার যাবতীয় কাজ তারা করছেন। তারা বয়স্কদের প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী ছিল। ছবিটি গত বৃহস্পতিবারের।
মনসুর আহমেদ, জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মো. তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিমানে এমন সেবা পেতাম। ট্রেনে এমন সার্ভিস আগে দেখিনি। আমার জানামতে কোন মহিলা চাকর ছিল না। আমাদের মতো প্রবীণদের প্রতি আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না। আমি যা চেয়েছি তারা আমাকে দিয়েছে।
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের আরেক যাত্রী মরিয়ম বেগম। দুই সন্তানকে নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছেন তিনি। মরিয়ম বেগম বলেন, “আগে আমি দুর্গন্ধযুক্ত ও নোংরা সিটওয়ালা ট্রেনকে বোঝাতাম। নাউ ট্রেনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার মানে প্লেন। চমৎকার সার্ভিস।’
এই ট্রেনের মহিলা স্টুয়ার্ড সাফনান আজকার পত্রিকাকে বলেন, “আমরা ভালো বেতনে কাজ করছি।” যাত্রীসেবা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছি। যাত্রীসেবা আমাদের প্রধান উদ্বেগ।
আরেক স্টুয়ার্ড রিতু সাহা বলেন, ‘এখানকার পুরুষ কর্মচারীরাও খুব হেল্পফুল। নিরাপত্তাও অনেক ভালো। নিজের ঘরের মতো কাজ করতে পারি।
১ ডিসেম্বর থেকে এই চিত্র এখন কক্সবাজার রুটের ট্রেনে। কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫০ জন মহিলা স্টুয়ার্ড সেবা দিচ্ছেন।
এক কথায় বলা যায়, ‘ট্রেন ব্যালার’ পরিষেবা এখন ট্রেনের পাশাপাশি বিমানেও পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং-অনবোর্ড সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এর সভাপতি মো. শাহ আলম। তার কোম্পানি সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন, মহানগর গোধুলি এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিস দিচ্ছে।
রেলওয়ে জানায়, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনে এখন নারীরা দায়িত্ব পালন করছেন। পর্যায়ক্রমে সুবর্ণ, সোনার বাংলা, তূর্ণার মতো আন্তঃনগর ট্রেনে মহিলা কর্মচারী নিয়োগ করা হবে। এ জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং-অনবোর্ড সার্ভিস প্রোভাইডার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ আলম আজকার পত্রিকাকে বলেন, “আমরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে নারীদের সেবক বানিয়েছি। আমি তাদের ভালো বেতনও দিই। একজন নারী হিসেবে আমিও খেয়াল রাখছি যেন লজ্জা না হয়। আমরা তাদের নিরাপত্তার দিকেও নজর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রায় ৫০ জন নারী স্টুয়ার্ড ট্রেনে যাত্রীসেবা দিচ্ছেন। নির্বাচনের পর সব আন্তঃনগর ট্রেনে নারী নিয়োগ করা হবে। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
রেলমন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, “নারী ও শিশুসহ যাত্রীসেবার উন্নয়নে নারী নার্সরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। সেই কথা মাথায় রেখেই আমি নারী কর্মচারী নিয়োগ করছি। দক্ষ, চৌকস, স্মার্ট—এই নারীরা এসেছেন। সাধারণ যাত্রীদের কাছে ‘ট্রেন বালা’ নামে পরিচিত।শুধু কক্সবাজার রুটে নয়, সব বিরতিহীন ট্রেনে এই পরিষেবা নিশ্চিত করা হবে।