জনগনের টাকায় বিভিন্ন প্রশিক্ষনের নামে নানা অজুহাতে দেশের সংসদ সদস্য ও সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমন একটা কালচারে পরিনত হয়েছে। দেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তারা ভ্রমন বিলাস চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে গনমাধ্যমে অনেক সমালোচনা হওয়ার সত্বেও যেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। অপ্রাঙ্গিক কাজের নামে যারা রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বিষয়টি বন্ধের জন্য দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ২৬শে মার্চ ( March ) কানাডার টরন্টোতে ( Toronto, Canada ) কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই একটি ফ্লাইট চালু করতে চলেছে। ফ্লাইটে বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও ক্ষমতাসীন দলের দুই সংসদ সদস্যসহ ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে ওই কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য হলো- অফিস ভাড়া দেওয়া, সেলস এজেন্ট নিয়োগ করা এবং রুট ম্যানেজমেন্টের পরামর্শ দেওয়া। এ জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
কানাডার টরন্টোতে ( Toronto, Canada ) বিমানের পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। একরামুজ্জামান, বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ( M Mahbub Ali ), মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন ( Mokammel Hossain ), এয়ার কমডোর মৃধা মো. একরামুজ্জামান ( Mridha Md. Ekramuzzaman ), বিমানের মহাব্যবস্থাপক মোক্তার হোসেন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালসহ মোট ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মকর্তা। সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সহ বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য।
এসব কর্মকর্তাদের অনেকেই জনগণের টাকায় একই উদ্দেশ্যে সফরে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে কানাডায় ( Canada ) একটি এয়ারলাইন অফিস ভাড়া নেওয়া, জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ ) নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং রুট পরিচালনার জন্য ট্রান্সপোর্ট কানাডার সাথে পরামর্শ করা।
প্রতিমন্ত্রীর যাবতীয় খরচ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বহন করবে এবং টিকিটের খরচ ব্যতীত অন্য সব খরচ বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় বহন করবে। সরকারি আদেশ ও মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের টিকিটের মূল্য বহন করবে। প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়ের খরচ তিনিই নিজেই বহন করবেন।
একই কারণে প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ মুসাব্বির ও মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদও অনাপত্তিপত্র নেন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম মনে করেন, একই উদ্দেশ্যে এত কর্মকর্তার কানাডায় যাওয়া কাম্য নয়।
এটি বলেছিল, যদি জিএসএ এখনও নির্বাচিত না হয় তবে আপনি কীভাবে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করবেন? আপনি সেখানে (জিএসএ) ছাড়া টিকিট বিক্রি করতে পারবেন না। আমি জানি না “বাণিজ্যিক ফ্লাইট” শব্দটি কতটা গ্রহণযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, জিএসএ নিয়োগের দায়িত্বও বিমানের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের। কেন হঠাৎ করে কানাডিয়ান জিএসএ নিয়োগে হস্তক্ষেপ করল মন্ত্রণালয়? এ বিষয়ে আমি জানি না।
তিনি আরও মনে করেন, পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক ফ্লাইট বলে কিছু হতে পারে না। বিমানের এমডি বলেন, জিএসসি নিয়োগ বিমানের কাজ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমডি আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, আসলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। বিমান এটি দেখভাল করবে।
তিনি বলেন, এই রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করতে এয়ারলাইনটির আরও ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, এখানে ক্যাবে কিছু পরীক্ষার বিষয় রয়েছে। একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট সহ একটি ফ্লাইটে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এর রুট পরিদর্শন এবং এটি দেখার জন্য। যেমন, আমাদের স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে এর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাহলে কেন ২৬ মার্চের এই ফ্লাইট, প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। প্রস্তুতি ছাড়া এমন ফ্লাইট ঠিক হয়নি বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন না করে ফ্লাইট পরিচালনা করা আত্মঘাতী প্রচেষ্টা হবে। তিনি আরও মনে করেন, এটা জনগণের টাকায় আনন্দ ভ্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রসঙ্গত, ফ্লা্ইট চালুর নামে বিদেশে যাওয়া দেশের অর্থ অপচয় করা কতটা যুক্তিসঙ্গত। প্রতিটি কাজের সঠিক পরিকল্পনা করে সেটির কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। যেকোন প্রকল্পে বা অন্যকোন সরকারি কাজে কর্ম শুরুর আগেই নানা অজুহাতে দেশের টাকা অপচয় করা এখন ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে সাধারন মানুষ মনে করেন।
খবর আরটিভির