গত দেড় দশকে ১১৬টি বড় ধরনের অনিয়ম নিয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে বেসিক ব্যাংক। যেখানে রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন শাখায় বেশি ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম রয়েছে। যাতে বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোও খেলাপি হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিয়মের এই সিরিজ বন্ধ না হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই ব্যাংক।
চাওয়ার আগেই ঋণ দিতে একধাপ এগিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। এমনকি প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা, সম্পদ বা নথি – এই মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তাগুলিও গৌণ হয়ে ওঠে। এমনই একটি কোম্পানি হল ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ। পর্যাপ্ত জামানত না থাকা সত্ত্বেও শান্তিনগর শাখা এই প্রতিষ্ঠানকে বিশাল ঋণ দেয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত যেখানে ৪৩ কোটি টাকা অনাদায়ী। তথ্য গোপনসহ নানা অনিয়মের কারণে এ ঋণ আদায়ে তৎপর নয় ব্যাংকটি। ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কোনো প্রতিনিধি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত দেড় দশকে শতাধিক অনিয়মের ঘটনায় বেসিক ব্যাংক টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। যেখানে রাজধানীর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন শাখায় বেশি অনিয়ম রয়েছে। যেমন হাজী আবদুস সোবাহান ও হামিদা সোবাহান কয়েক কোটি টাকার খেলাপি হলেও কারওয়ান বাজার শাখা তাদের খেলাপির তালিকায় যুক্ত করেনি। পাইওনিয়ার ক্যাজুয়াল ওয়্যার নামের একটি প্রতিষ্ঠান গুলশান শাখা থেকে প্রণোদনা ঋণ নিয়ে উধাও। আর বংশাল শাখা ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ৪৬ কোটি টাকা আদায় করতে পারছে না। চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নিয়েছে জিপিএইচ ইস্পাত ৬৩ শতাংশ। যা ওই শাখার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অনারারি ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিভিন্নভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে। দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না।এসব মামলার বেশির ভাগই চলছে অর্থঋণ আদালতে।
ব্যাংকের বড় ১০ গ্রাহকের ঋণ নিয়ে এখনো বিপাকে পড়েছেন ব্যাংকটি। যাদের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তাদের অধিকাংশ ঋণই ঝুঁকিপূর্ণ।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান মনসুর বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা কি জানতেন না যে তারা যাদের টাকা দিচ্ছেন তাদের এত টাকা পাওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এটা অনেকদিন ধরেই হয়েছে। সরকার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এর জন্য দায়ী। এখনো কোনো বিচার হয়নি। আবদুল হাই বাচ্চুর বিষয়ে তারা চার্জশিট দেবেন বলে বলা হলেও তা দেওয়া হচ্ছে না।
শুধু তাই নয়, বেসিক ব্যাংক মেসার্স ফেরো অ্যালয় কোম্পানি, মেসার্স ট্রান্স ওশান রিসাইক্লিং ইয়ার্ড, প্যাসিফিক স্টিল এন্টারপ্রাইজ এবং রিপাবলিক ট্রেডিং সিন্ডিকেট, রয়্যাল উইভিং অ্যান্ড কোটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, এমএএইচ স্পিনিং মিলসের ঋণ জালিয়াতির কারণে সমস্যায় পড়েছে।
সাবেক গভর্নর আহমেদ সালাউদ্দিন বলেন, মূল সমস্যা হলো সরকার তার ইচ্ছানুযায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। অন্যান্য প্রয়োজনে সদস্য নিয়োগ করে। কিন্তু তারা খুব একটা দক্ষ নয়। তারা মাঝে মাঝে রাজনৈতিক পরিচয় বহন করে। এ কারণেই এ অবস্থা।